শরীফুল ইসলাম
অগ্নিকাণ্ড যেন বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নিত্য ঘটনা। দুদিন যেতে না যেতেই দেখা যায় আগুনের লেলিহান শিখা। বিশেষ করে নতুন বছরে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড, রাজধানীর গুলশান, মহাখালী, পুরান ঢাকার বঙ্গবাজারে ঘটে যাওয়া অগ্নিকাণ্ড ভীষণ আঘাত হেনেছে মানুষের মনে। সপ্তাহের ব্যবধানে দুইবার করে সীতাকুণ্ডে আগুন লাগার ঘটনা সত্যিই হৃদয়বিদারক।
অগ্নিকাণ্ড মানেই বিশাল একটা ক্ষয়ক্ষতি, হতাহত। আগুন এমন একটা জিনিস, যেটাকে চাইলেই নিয়ন্ত্রণে আনা যায় না। যেটার একবার সুত্রপাত হলেই স্বীকার হতে হয় জানমালের ভীষণ ক্ষয়ক্ষতির। তবে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার এই বিলম্বের কারণ শুধু উন্নত প্রযুক্তি কিংবা পানির সংকট নয়। এর বড় একটা কারণ হিসেবে রয়েছে উৎসুক জনতা!
অগ্নিকাণ্ড ঘটার পর ফায়ার সার্ভিসের কাছে খবর যাওয়ার আগেই ঘটনাস্থলে ভীড় জমে যায় উৎসুক মানুষের। এরমধ্যে দায়িত্বশীল কেউ কেউ হয়তো এগিয়ে আসেন আগুন নেভানোর কাজে। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষ তখন শুধু নিজ চোখে ঘটনা পর্যবেক্ষণ করার লক্ষ্যেই অবস্থান নেন সেখানে। বেশ কিছু ক্ষেত্রে শুরুতেই এগিয়ে আসা সাধারণ মানুষ আগুন নেভাতে সক্ষম হলেও অনেক সময় বিপদে পড়েন নিজেরা। এই জিনিসটা ফায়ার সার্ভিস তথা অগ্নিনির্বাপক কর্মী আসার আগ পর্যন্ত ঠিক থাকলেও প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই দেখা যায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা নিজেদের গাড়ি এবং অন্যান্য সরঞ্জাম নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে গিয়ে সম্মুখীন হোন বিশাল জনতার ভীড়ে। যা তাদের সময়ের সাথে সাথে বৃদ্ধি করে দেয় আগুনের উত্তপ্ততাকে।
বাংলাদেশে পানি একটি বড় সমস্যা হওয়ায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসকে পানি আনতে পাইপ সংযোগ করতে হয় বহু দূর দূরান্তে। কিন্তু ভীড়ের কারণে সে লাইন সংযোগ করা এবং তার নিরবিচ্ছিন্ন চলাচল নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না কখনোই। অতিরিক্ত ভীড় এবং মানুষের হুড়োহুড়ি, পানির লাইনের উপর দিয়ে ছুটে চলা এসবের ফলে সুষ্ঠুভাবে কাজ করতে পারে না ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা। ঘটনাস্থলে দায়িত্বরত সামরিক বাহিনীর কথা শুনতেও নারাজ সাধারণ জনগণ। উলটো অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় ফায়ার সার্ভিস ও অন্যান্য দায়িত্বরত কর্মীদের উপর চড়াও হচ্ছে সাধারণ জনগণ। এর বড় একটা অংশ মূলত মোবাইলে ভিডিও করা এবং ছবি তোলার লক্ষ্যেই ঘটনাস্থলে ভীড় জমায়। যেকোনো দুর্ঘটনায় যতজন মানুষ সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসেন তার শতগুণ বেশি মানুষ আসে ঘটনা সচক্ষে দেখা, ভিডিও/ছবি তোলার লক্ষ্যে। ফলে প্রায় সব সময় যেকোনো দুর্ঘটনায় দেখা যায় উৎসুক জনতার কারণে উদ্ধারকাজ তথা দায়িত্বশীলরা তাদের কাজে বাঁধা প্রাপ্ত হোন।
শরীফুল ইসলাম
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা