শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:৪৩ পূর্বাহ্ন
ব্রেকিং নিউজঃ
প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদে নাগরপুর উপজেলা বিএনপি’র সাংবাদিক সম্মেলন ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা পেল সেনাবাহিনী নাগরপুরে শহীদ ক্যাডেট স্কুলে কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা ও অভিভাবক সমাবেশ অনুষ্ঠিত ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, নাগরপুর উপজেলা শাখার উদ্যোগে গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত জয়তুন ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের উদ্যোগে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ “জনতার সময়” অনলাইন নিউজ পোর্টালের সম্পাদক হলেন কাজী মোস্তফা রুমি ডুমুরিয়ায় ক্লাইমেট স্মার্ট প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃষক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত নোয়াখালীতে সি‌লেট-চট্টগ্রাম ফ্রেন্ড‌শীপ ফাউ‌ন্ডেশনের মে‌ডি‌কেল ক্যাম্প অনু‌ষ্ঠিত জাতিসংঘের অধিবেশনে প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী ৭ জন আইওআই(IOI) তে বাংলাদেশের প্রথম স্বর্ণ পদক লাভ করেছেন সিলেটের দেবজ্যোতি দাস সৌম্য

বাংলাদেশে এক,পাঁচ,১০,২৫ ও ৫০ পয়সার মতো ধাতব মুদ্রার ব্যবহার নেই কেন?

চ্যানেল ওয়ান বিডি ডেস্কঃ

বাংলাদেশে এক পয়সার ব্যবহার মনে করতে না পারলেও এক টাকায় চারটি লজেন্স আর আট আনা বা ৫০ পয়সায় আইসক্রিম কেনার অভিজ্ঞতার কথা হয়তো অনেকেই মনে করতে পারেন।বর্তমানে এক টাকার চেয়ে কম মূল্য মানের এসব ধাতব মুদ্রার ব্যবহার চোখে পড়ে না বললেই চলে।বর্তমানে এক টাকার চেয়ে কম মূল্য মানের এসব ধাতব মুদ্রা গুলো বিলুপ্তির পথে।এক,পাঁচ,১০,২৫ ও ৫০ পয়সা মুদ্রার ব্যবহার কমে যাওয়ার কারনে যেমন বর্তমানে বাজারে চলেনা এই পয়সা গুলো বর্তমানে এই মুদ্রা অচল অবস্থায় আছে ঠিক তেমনি পরবর্তী সময়ে বাজারে আসা এক টাকা,দুই টাকা এবং পাঁচ টাকার ধাতব মুদ্রার ব্যবহারও এখন আর চোখে পড়ে না।এক,পাঁচ,১০,২৫ ও ৫০ পয়সার মতো হয়তো এই এক টাকা,দুই টাকা এবং পাঁচ টাকার ধাতব মুদ্রা গুলোও বাজারে ব্যবহার না হওয়ার কারনে অচল ও বিলুপ্ত হয়ে যাবে আস্তে আস্তে।

স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে প্রথম চারটি ধাতব মুদ্রা প্রচলন করা হয়।এগুলো হচ্ছে পাঁচ পয়সা,১০ পয়সা,২৫ পয়সা এবং ৫০ পয়সা।এর পরের বছর ১৯৭৪ সালে আরেকটি নতুন মুদ্রা সংযোজিত হয় যার মূল্যমান ছিল এক পয়সা।এই ধাতব মুদ্রা গুলো এখন একদিকে যেমন মানুষের সংগ্রহে কম রয়েছে,তেমনি এসবের ব্যবহারও এখন আর হয় না।

আগে এসব কয়েন দিয়ে পণ্য কেনা সম্ভব হলেও,এখন সব চেয়ে কম দামের পণ্যটি কিনতে গেলেও দাম পরিশোধ করতে যে পরিমাণ ধাতব মুদ্রা ব্যবহার করতে হবে তা ওজনে বেশ ভারী।বাংলাদেশ ব্যাংকের কমিউনিকেশনস এন্ড পাবলিকেশন্স বিভাগের যুগ্ম-পরিচালক তানভীর আহমেদ বলেন,শখের বসে অনেকেই ছোট ছোট ধাতব মুদ্রা সংগ্রহ করেন।কিন্তু এগুলোর আসলে তেমন কোন ব্যবহার নেই।

তাহলে এসব ধাতব মুদ্রা কি এখন অচল?

১৯৭২ সালের বাংলাদেশ কয়েনেজ অ্যাক্ট অনুযায়ী,এই ধাতব মুদ্রা গুলো বাতিল বা অচল করা হয়নি এবং এগুলো এখনো চাহিদা অনুযায়ী বিনিময়ের সুযোগ রয়েছে। এছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকও ধাতব মুদ্রা ব্যবহারে জনগনকে উৎসাহিত করে থাকে।

কেমন ছিল পয়সা গুলো?

১৯৭৩ সালে যে এক,পাঁচ ও ১০ পয়সার কয়েন প্রচলিত হয়েছিল,সেগুলো মূলত অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি।অন্যদিকে ২৫ এবং ৫০ পয়সা ছিল ইস্পাতের তৈরি।এই সময়ে প্রচলিত এক পয়সায় একদিকে জাতীয় প্রতীক এবং অন্যদিকে লাঙল ও শিল্প চাকার প্রতিকৃতি ছিল।

১০ পয়সার একদিকে জাতীয় প্রতীক অন্যদিকে পানপাতা,২৫ পয়সার একদিকে জাতীয় প্রতীক,অন্যদিকে রুই মাছ,৫০ পয়সার একদিকে জাতীয় প্রতীক অন্যদিকে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের প্রতিকৃতি ছিল।

তার পর ১৯৭৪ সালে এক,পাঁচ ১০ ও ২৫ পয়সার মুদ্রা আবারো বাজারে ছাড়া হয়। এসময় এক পয়সার নকশায় আগের তুলনায় পরিবর্তন আসে।এর একদিকে জাতীয় প্রতীক থাকলেও অন্যদিকে অলঙ্কার সমৃদ্ধ নকশা,পুষ্পশোভিত নিদর্শন যুক্ত করা হয়।

১৯৭৭ সালে এক পয়সা বাদে বাকি চারটি ধাতব মুদ্রা বাজারে আসে।এগুলোর মধ্যে পাঁচ পয়সার মুদ্রার নকশা অপরিবর্তিত থাকে।পরিবর্তন আসে অন্য তিনটি মুদ্রার নকশায়।

১০ পয়সার মুদ্রার একপাশে জাতীয় প্রতীক,অন্যপাশে একজন পুরুষ ও মহিলা কোলে বাচ্চাসহ একে অপরের অভিমুখে একই আসনে বসা,২৫ পয়সার একদিকে জাতীয় প্রতীক এবং অন্যদিকে রয়েল বেঙ্গল টাইগার এবং ৫০ পয়সায় জাতীয় প্রতীক ছাড়াও ইলিশ, মুরগি,আনারস ও কলার প্রতিকৃতি যুক্ত করা হয়।

পয়সা কি এখনো তৈরি হয়?

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী,মুদ্রার চাহিদা কতটা আছে তার উপর নির্ভর করে যে ওই মুদ্রা বানানো হবে কি না।কারণ মুদ্রা উৎপাদনও বেশ ব্যয়বহুল।কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী,গত অর্থবছরে টাকা ছাপানোর জন্য খরচ হয়ছে ৩৮৪ কোটি টাকা।

বাংলাদেশে যেসব কাগজের তৈরি ব্যাংক নোট রয়েছে সেগুলো বাংলাদেশ সিকিউরিটি প্রিন্টিং কর্পোরেশন থেকে ছাপানো হয়।কিন্তু ধাতব মুদ্রা দেশে নয় বরং অন্য দেশ থেকে তৈরি করে নিয়ে আসতে হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা মি.আহমেদ জানান,বাংলাদেশে সবশেষ ২০১১-১২ অর্থবছরে তিনটি ধাতব মুদ্রা বিদেশ থেকে মিন্ট করে বা তৈরি করে নিয়ে আসা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে এক টাকা,দুই টাকা এবং পাঁচ টাকার ধাতব মুদ্রা।এর মধ্যে এক টাকার মুদ্রা স্লোভাকিয়া থেকে,দুই টাকার মুদ্রা জাপান থেকে এবং পাঁচ টাকার মুদ্রা ফিনল্যান্ড থেকে তৈরি করা হয়েছে।

অন্যদিকে এক টাকার চেয়ে কম মূল্যের যেসব ধাতব মুদ্রা রয়েছে,যেমন এক পয়সা,পাঁচ পয়সা,১০ পয়সা,২৫ পয়সা এবং ৫০ পয়সা-এগুলো তৈরি করা আপাতত বন্ধ রয়েছে। কারণ হিসেবে মি.আহমেদ জানান,বাজারে এসব মুদ্রার যে চাহিদা রয়েছে তার চেয়ে বেশি পরিমাণ মুদ্রা মজুদ রয়েছে।ধাতব মুদ্রা ব্যবহারের ক্ষেত্র বাড়ানো গেলে এর ব্যবহার বাড়তে পারে বলে মনে করেন মি.আহমেদ।

পয়সার ব্যবহার কতটা আছে?

এক টাকার চেয়ে কম মূল্যমানের পয়সার কোন ব্যবহার নেই।এমনকি এক টাকার কয়েনের ব্যবহারও তেমন নেই বললেই চলে।তবে দুই টাকা এবং পাঁচ টাকার ধাতব মুদ্রার ব্যবহার এখনো আছে।ব্যবহার না থাকার কারণেই ছোট পয়সার ব্যবহার চোখে পড়ে না বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা তানভীর আহমেদ বলেন,কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে জনগণকে কয়েন বা ধাতব মুদ্রা ব্যবহারে উৎসাহিত করা হয়।

এছাড়া প্রতিটা ব্যাংকের প্রতিটা শাখায় ধাতব মুদ্রা মজুদের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা রয়েছে।যাতে এসব মুদ্রা জনগণের কাছে বিতরণ বা লেনদেন করা যায়। যেকোন ব্যক্তি যেকোন পরিমাণ ধাতব মুদ্রা ব্যাংক থেকে নিতে পারবেন।এতে কোন বাধ্য বাধকতা নেই।

মি.আহমেদ জানান,যেহেতু ধাতব মুদ্রা জনগণ ও অন্যান্য ব্যাংক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকে যায়,তাই চাহিদার প্রেক্ষিতে যথেষ্ট পরিমাণ মুদ্রা কেন্দ্রীয় ব্যাংকে মজুদ রয়েছে। যেকোন ব্যক্তি তার চাহিদা অনুযায়ী,যেকোন ধরনের ধাতব মুদ্রা কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন।তবে বিভিন্ন কারণে জনগণ ধাতব মুদ্রা বা পয়সার ব্যবহারে আগ্রহ হারিয়েছেন বলে মনে করা হয়।

বর্তমানে বাজার ব্যবস্থায় পণ্য বা সেবার দাম পরিশোধের ক্ষেত্রেও পয়সার ব্যবহার নেই।সাধারণত দাম একটি পূর্ণ অঙ্কে পরিশোধ করতে হয়,যে কারণে পয়সার ব্যবহার কমে গেছে।আবার ধাতব মুদ্রা ওজনে ভারী হওয়ার কারণেও অনেকে এসব কয়েন ব্যবহার করতে চান না।

সূত্র: বিবিসি বাংলা।



Our Like Page