মো: জুনেদ আহমেদ, সুনামগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি:
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ ছাতক-সিলেট রেলপথ মেরামতের কোন উদ্যোগ এ পর্যন্ত নেয়া হচ্ছেনা। করোনা মহামারির কারণে সারা দেশের সাথে এই রেলপথে রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়ে। ছাতক- সিলেট রেলপথে রেল যোগাযোগ চালু হবার আগেই ভয়াবহ বন্যায় এ রেলপথের ছাতক থেকে গোবিন্দগঞ্জ পর্যন্ত ১৩ কি.মি. লাইন লন্ড-বন্ড করে দেয়। বন্যায় রেল পথটির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ফলে বড় ধরনের মেরামতের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। মেরামত ছাড়া এ রেলপথে আর রেল চলাচল সম্ভব নয়। লাইনে পাথর নেই, মাটি সরে গেছে, উপড়ে গেছে লাইন,শ্লিপার ঝুলে রয়েছে। লাইনের কোন-কোন স্থানে বিশাল গর্তের ও সৃষ্টি হয়েছে।
সব মিলিয়ে ছাতক- সিলেট রেলপথে প্রায় ৩ বছর ধরে রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। যার ফলে এ অঞ্চলের সাধারণ যাত্রীদের পড়তে হয়েছে বিপাকে। যাতায়াতের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হচ্ছে তাদের। রেলপথে যোগাযোগ বন্ধ হওয়ার কারণে এখানে ব্যবসা-বানিজ্যে
ও মারাত্মক প্রভাব পড়েছে।
ছাতক-সিলেট ৩৪ কিলোমিটার রেলপথ স্থাপিত হয়েছিলো ১৯৫৪ সালে। এ লাইনে ছাতক, সিলেট স্টেশন ছাড়াও আরো আফজলাবাদ,খাজঞ্চিগাও ও সৎপুরে রয়েছে রেলওয়ের স্টেশন। সব কটি স্টেশনে কোয়ার্টার সহ বিভিন্ন স্থাপনা রয়েছে রেল বিভাগের।এই রেলপথ সরকারের একটি লাভজনক খাত ছিলো। ১৯৭৯ সালে ছাতক রেলওয়ে স্টেশন রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে রেল বিভাগে শ্রেষ্টত্ব অর্জন করে। সরকারি ও বেসরকারি মালামাল পরিবহনের ক্ষেত্রে এই রেলপথের উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে।
ছাতকে রয়েছে রেলওয়ের বিশাল ছাতক বাজার স্টেশনসহ শতাধিক স্থাপনা, রেলওয়ের নিয়ন্ত্রনাধীন কংক্রিট স্লিপার প্লান্ট, ছাতক- ভোলাগঞ্জ রজ্জুপথ,রেস্ট হাউজ, জমিসহ কোটি- কোটি টাকার সম্পদ। ভোলাগঞ্জে ও ৩০০ একর জমিসহ রেস্ট হাউজ, স্থাপনা ও নিজস্ব পাথর কোয়ারী রয়েছে। ছাতকেই ছিলো ভোলাগঞ্জের নিয়ন্ত্রণ। ছাতকে তাদের আলাদা অফিস সহ বিভিন্ন স্থাপনা রয়েছে। সব মিলিয়ে রেলওয়ের কোটি কোটি টাকা মুল্যের সম্পদ এখন অরক্ষিত। দিনে – রাতে চুরি হচ্ছে সরকারি এ সম্পদ। বে- হাত হয়ে যাচ্ছে রেলপথ বিভাগের মুল্যবান জমি।রেলপথটি চালু হলেই তা পূর্বাবস্থায় ফিরতে পারে এমন ধারণা এলাকার লোকজনের।
ছাতক পৌরসভার কাউন্সিলর জসিম উদ্দিন সুমেন জানান, ছাতক রেলওয়ে স্টেশন এলাকা ছিলো একটি বানিজ্যিক এলাকা। অনেকেই ব্যবসা করতেন এর আশ-পাশে। দিনে মালবাহী ছাড়া ৩ টি ট্রেন যাতায়াত করতো এখানে। রেললাইন ও স্টেশন এলাকা সব সময় ছিলো সরগরম। এই লাইনে দ্রুত ট্রেন চলাচল এখন সময়ের দাবি।
ছাতক -দোয়ারাবাজারের ব্যবসায়ী সহ সর্বস্তরের মানুষের দাবি লক্ষ-লক্ষ যাত্রীদের স্বল্প মুল্যে যাতায়াতও কম খরছে পন্য পরিবহনের ভরসাস্থল ছাতক- সিলেট রেলপথ সংস্কার করে দ্রুত সময়ের মধ্যে চালু করা হোক।
দোয়ারাবাজার এলাকার কাঁচামাল ব্যবসায়ী আব্দুল হামিদ,আব্দুল মতলিব, আব্দুল কাইয়ুম,তাহের আলী,খোকন মিয়াসহ সব্জি চাষীরা জানান,এলাকায় উৎপাদিত সব্জি আগে ছাতক হয়ে ট্রেনে সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠানো হতো। কম খরছে ভালো মুল্য পাওয়া যেতো। ট্রেন বন্ধ হওয়ার পর থেকে এ অঞ্চলের সব্জি আর সিলেটে পাঠানো হয়না।
ব্যবসায়ী আতিকুর রহমান, তাজুল ইসলাম,নাজমুল হোসেন,সুধাংশু দাস,সাইফুল আলম মধু,জালালউদ্দিন জানান,ট্রেনের মাধ্যমে দেশের রেলপথে ব্যবহারের সকল পাথর ছাতক থেকেই পরিবহন করা হতো। খাদ্য গোদামের সকল ধান- চাল আসতো মালবাহী ট্রেনে। ব্যবসায়ীরা ব্যবসায় সকল পন্য ট্রেনেই কম খরছে আনা নেয়া করতেন। সকালের ট্রেনে ছাতক,বাংলাবাজার, দোহালিয়া,নরসিংপুর এলাকার অনেক ছাত্র সিলেটের এমসি কলেজ,মদন মোহন কলেজ ও টেকনিক্যাল কলেজে গিয়ে লেখাপড়া করে বিকেলের ট্রেনে তারা বাড়ি ফিরতেন। ব্যবসায়ীরা আশাবাদী দ্রুত সংস্কারের মাধ্যমে ছাতক -সিলেট রেলপথ চালু করবে রেলবিভাগ।
ছাতক রেলওয়ের উপ সহকারী প্রকৌশলী জুবায়ের আহমদ জানান, ইঞ্জিন না থাকার কারণে এই লাইনে কিছু দিন রেল যোগাযোগ বন্ধ ছিলো। বন্যায় লাইন ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় এ টি আরো দীর্ঘায়িত হয়েছে। উর্ধতন কর্তৃপক্ষ লাইনের বিষয়ে অবগত রয়েছেন। তিনি আশাবাদী খুব শীঘ্রই লাইন সংস্কার করে লাইনে ট্রেন চলাচল শুরু হবে।
ছাতক রেলওয়ের সাবেক উর্ধতন উপসহকারী প্রকৌশলী অঃ দাঃ ( বি. আর. কার্য) আব্দুল নুর জানান, ছাতক- সিলেট রেলপথ সরকারের একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান। এই রেলপথে যাত্রীর চেয়ে মালামাল পরিবহন বেশি হয়ে থাকে। এখানে দেশের একমাত্র সরকারিভাবে স্লিপার উৎপাদনের জন্য কংক্রিট স্লিপার প্লান্ট রয়েছে। এই প্লান্টের উৎপাদিত মালামাল পরিবহনের জন্যেই এখানে রেল যোগাযোগ চালু রাখার প্রয়োজন রয়েছে।
রেলওেয়ের পূর্বাঞ্চলীয় জোনের বিভাগীয় প্রকৌশলী সিরাজ জিন্নাত জানিয়েছেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ দেশের সব রেলপথ সংস্কার করা হবে। ছাতক- সিলেট রেলপথের বিষয়টি ও উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নজরে আছে।এ ব্যাপারে দ্রুত একটি সমাধানের চিন্তা ভাবনা চলছে।##