আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ
ভারতে প্রায় তিন দশক আগে ধর্ষণের শিকার হওয়া এক নারী বিচারের জন্য এখনো লড়ে যাচ্ছেন। তাত্পর্যপূর্ণ বিষয় হচ্ছে,ওই নারীর এই লড়াইয়ে পাশে দাঁড়িয়েছেন ওই ধর্ষণের কারণেই জন্ম নেওয়া সন্তান। উত্তরপ্রদেশের শাহজাহানপুরে এ ঘটনা ঘটেছে।
শাহজাহানপুরের ওই ভুক্তভোগী নারীকে ১২ বছর বয়সে ছয় মাস ধরে ধর্ষণ করেছিল প্রতিবেশী দুই ব্যক্তি।
তারা সম্পর্কে পরস্পরের ভাই। ঘটনাটি ১৯৯৪ সালের দিককার।
ভুক্তভোগী নারী জানান,ঘরে একা থাকলে দেওয়াল টপকে ওই দুই ভাই বাড়িতে ঢুকে তাকে ধর্ষণ করতো।
এক পর্যায়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে বোন তাকে চিকিত্সকের কাছে নিয়ে যান। তখনই ঘটনা সামনে আসে। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থা বেশ অগ্রসর পর্যায়ে চলে যাওয়ায় তখন গর্ভপাত সম্ভব ছিল না। এরপর জন্ম নেওয়া সন্তানকে তিনি একসময় সামাজিক কারণে দত্তক দিতে বাধ্য হন।
দত্তক দেওয়ার ১৩ বছর পর মায়ের কাছে ফিরে এসে ওই নারীর ছেলে মাকে আইন লড়াইয়ে সাহায্য করছেন। নানা নাটকীয়তার পর গত ৩১ জুলাই পুলিশ এক অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে। বুধবার দ্বিতীয় অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের একজন মোহাম্মদ রাজি এবং আরেকজন তার ভাই নাকি হাসান।
ঘটনার সময় মামলা না করার কারণ সম্পর্কে ওই নারী বলেন,ধর্ষণের ঘটনা কাউকে জানালে আমার পরিবারকে মেরে ফেলার এবং বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হতো।
সন্তানের কথা বলতে গিয়ে ওই নারী বলেন, এই বাচ্চার জন্য আমি অনেক কষ্ট সহ্য করেছি। কিন্তু তার মুখটা দেখারও সুযোগ পাইনি।
২০০০ সালে এই নারীর বিয়ে হয়। এর পর তার দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম হয়। কিন্তু একসময় ধর্ষণের শিকার হওয়ার কথা জানতে পেরে তাকেই দোষারোপ করতে থাকে স্বামী। সন্তানসহ তাকে বের করে দেওয়া হয়। এরপর বোনের বাড়িতে আশ্রয় নেন তিনি।
ধর্ষণের ফলে জন্ম নেওয়া শিশুটি দত্তক পরিবারে থেকে বড় হতে থাকে। সে সমাজের নানা দিক থেকে বিদ্রুপের শিকার হয়। পিতৃপরিচয় দিতে না পারায় নানা বৈষম্য ও বঞ্চণার মুখেও পড়তে হয় ছেলেটিকে। শেষমেশ সে মায়ের কাছে ফিরে যায়।
ওই নারী বলেন,ছেলে বাবার পরিচয় জানতে চাইতো। এ কারণে কিছুদিন তাকে বকাঝকাও করছেন তিনি। শেষ পর্যন্ত প্রকৃত ঘটনা খুলে বলেন। সন্তান তখনই তার মায়ের পাশে শক্তি হয়ে দাঁড়ায়।আইনি লড়াইয়ের জন্য মাকে তাগাদা দিতে থাকে সে। এরপর নানা চড়াই উত্রাই পেরিয়ে একজন আইনজীবীর আবেদনের পরিপ্রক্ষিতে শাহজাজানপুরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট গত বছরের মার্চে মামলা গ্রহণ করেন। পুলিশ জানিয়েছে,ডিএনএ পরীক্ষার ফলাফল এই মামলার এক বড় প্রমাণ।
সূত্র: বিবিসি