ভোট নিয়ে ৪০০ সুপারিশ – Channel One BD
মঙ্গলবার, ১০ জুন ২০২৫, ১২:২৩ অপরাহ্ন
ব্রেকিং নিউজঃ
টাঙ্গাইল নাগরপুরের বেলতৈলে ফুটবল ফাইনাল টুর্নামেন্ট’২৫ অনুষ্ঠিত টাঙ্গাইলের দেলদুয়ারে ঈদ পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময়ে ব্যস্ত সময় পার করলেন জননেতা মোঃ শরীফুল ইসলাম স্বপন বানিয়াচং উপজেলায় দুপক্ষের সংঘর্ষে একজন নিহতের ঘটনায় উসমান নামের একজন গ্রেফতার মিশিগানে ঈদ সাবেক তালামীযের দায়িত্বশীল নিয়ে ঈদ পূর্ণমিলনীয় অনুষ্ঠান সম্পন্ন পবিত্র ঈদুল আযহা আপনাদের জীবনে বয়ে আনুক অনাবিল সুখ, শান্তি ও আনন্দের ঘনঘটা- ওসি মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম ঈদুল আযহা কেবল একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি একটি আত্মত্যাগের প্রতীক- জননেতা মোঃ হাবিবুর রহমান হবি পবিত্র ঈদুল আযহা সকলের জীবনে বয়ে আনুক অনাবিল সুখ শান্তি ও আনন্দের ঘনঘটা- জননেতা মীর আবুল কালাম আজাদ রতন পবিত্র ঈদুল আযহার কোরবানির এই ত্যাগের মাধ্যমে প্রিয় বাংলাদেশ থেকে মুছে যাক সকল অপশক্তি – জননেতা মোঃ মাইনুল আলম খান কনক ত্যাগের মহিমায় উজ্জীবিত পবিত্র ঈদুল আযহা সকলের জীবনে বয়ে আনুক অনাবিল সুখ, শান্তি ও আনন্দের ঘনঘটা – জননেতা মোঃ শরীফুল ইসলাম স্বপন মহান আল্লাহর প্রতি গভীর আনুগত্য ও সর্বোচ্চ ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর পবিত্র ঈদুল আযহা- জননেতা মোঃ আতিকুর রহমান আতিক

ভোট নিয়ে ৪০০ সুপারিশ

গোলাম রাব্বানীঃ

আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট গ্রহণের দাবি জানিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সেই সঙ্গে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে হাওয়া ভবনের মাধ্যমে দলীয়ভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত প্রশাসন,পুলিশ ও নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্বাচনী দায়িত্বের বাইরে রাখাসহ একগুচ্ছ প্রস্তাব দিয়েছে দলটি। গতকাল ইসির সংলাপে অংশ নিয়ে এসব প্রস্তাব দেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচন কমিশন আয়োজিত ধারাবাহিক সংলাপ গতকাল শেষ হয়েছে।

নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এ সংলাপ করে নির্বাচন কমিশন। সংলাপে আওয়ামী লীগ,জাতীয় পার্টিসহ ২৮টি দল অংশ নেয়। আর সংলাপ বর্জন করেছে বিএনপিসহ ৯টি দল। তবে দুটি দল পরে ইসির সঙ্গে সংলাপ করার জন্য সময় চেয়েছে।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ইসির কাছে প্রায় ৪০০ সুপারিশ জমা পড়েছে। এর মধ্যে ২৮টি দল সংলাপে অংশ নিয়ে সরাসরি ইসির কাছে সুপারিশ দিয়েছে। বাসদ সংলাপে না গিয়ে লিখিতভাবে প্রস্তাব পাঠিয়েছে। সিপিবি সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন প্রস্তাবনা দিয়েছে।

গতকাল শেষ দিন সকালে সংলাপে অংশ নেয় জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি (জাপা)। দলটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিদ্যমান পদ্ধতির পরিবর্তন চায় সেই সঙ্গে নির্বাচনে অনিয়ম-দুর্নীতি রোধে ভোটের দিন সকালে কেন্দ্রে কেন্দ্রে ব্যালট পেপার পাঠানো,নির্বাচনী ব্যয় দ্বিগুণ করে ৫০ লাখ টাকা করার প্রস্তাব করেছে দলটি। ইভিএম পদ্ধতিতে জনগণের আস্থা নেই বলেও সংলাপে মত দেন দলের মহাসচিব। এদিকে নির্বাচনের সময় স্বরাষ্ট্র,জনপ্রশাসন,প্রতিরক্ষা ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ইসির হাতে রাখতে আইন সংশোধনের প্রস্তাব দিয়েছেন বিভিন্ন দলের নেতারা। কোনো কোনো রাজনৈতিক দল বলেছে,এ জন্য সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন হবে না,আইন সংশোধন করলেই চলবে।

এ ছাড়া ইভিএমে ভোট গ্রহণে পক্ষে-বিপক্ষে মত,ভোট কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা বসানো,সংসদ নির্বাচনে ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের রিটার্নিং অফিসার করা, সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচন,নির্বাচনের সময় সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া,নির্বাচনী ব্যয় বাড়ানো ও কমানোর সুপারিশ করেছে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলো।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনে ইভিএম চায় আওয়ামী লীগঃ

গতকাল নির্বাচন ভবনে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দলের পক্ষ থেকে এসব প্রস্তাব তুলে ধরেন। সাধারণ সম্পাদক বলেন,ভোট ডাকাতি ও ভোট কারচুপি বন্ধে ইভিএমের কোনো বিকল্প নেই। আমরা ইভিএম মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি,চেতনায় ধারণা করি। বিশেষ কোনো এলাকা নয়, আমরা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ৩০০ আসনেই ইভিএমে ভোটের দাবি জানাচ্ছি। আওয়ামী লীগ মনে করে,ইসির কাজে ইভিএম,অন্যান্য প্রযুক্তিসহ সব কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বৃদ্ধি পেয়েছে। আগের কমিশনও কয়েকটি সংসদীয় আসনে,উপনির্বাচনে ও স্থানীয় নির্বাচনে ইভিএমে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে বলে জানিয়েছেন বলে উল্লেখ করেন তিনি। বিএনপি ও কিছু দল ইভিএম নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে বলে মন্তব্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন,একটা কথা শুনতে পাই,নির্বাচনে ভোটারদের অনুপস্থিতির কথা এখান থেকেও বলা হয়। আমি এর সঙ্গে একদম একমত নই। কাগজপত্র এ অফিসে তো আছে কোনো কোনো এলাকায় মহিলাদের বিশাল লাইন স্থানীয় নির্বাচনে। ভোটারদের অনাগ্রহের যে বিষয়টি নিয়ে বিএনপি নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে আর ইসিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে যাচ্ছে-এটা সর্বৈব মিথ্যা,এটা অপপ্রচার। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু বলেন,সেনাবাহিনী,বিজিবি,র‌্যাব সবই কিন্তু নির্বাচনে থাকে। এমন নয় যে সেনাবাহিনী থাকে না। সেনাবাহিনী টাস্কফোর্স হিসেবে থাকে। প্রয়োজনে তাদের কাজে লাগানো হয়। তিনি বলেন,যারা সংলাপে এসেছে তারা কিন্তু নির্বাচনে যাবে। তারা মনে করে,সব কথা যদি সরকারি দলের মতো হয়ে যায় তাহলে হয়তো আমরা দালাল হয়ে যাব। তারা সরকারের সঙ্গে আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ে আছে সেটা মনে হবে। এ জন্যই তারা কিছু ব্যতিক্রমধর্মী কথা বলে। আর যে দলটি নির্বাচনে আসতে চাইছে না এটা তাদের চিরদিনেরই অভ্যাস। নির্বাচন না করার প্রক্রিয়ার সঙ্গে তারা সব সময় ছিল। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু,সুন্দর ও নিরপেক্ষ হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে আওয়ামী লীগ সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ড.আবদুর রাজ্জাক বলেন, নির্বাচনের সম্পূর্ণ দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। আর একটি বড় ও সরকারে থাকা রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের দায়িত্ব আপনাদের সহায়তা করা। নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ড.রাজ্জাক বলেন, আগামী নির্বাচনটা যে হবে এটা নিয়ে যেন আমরা সবাই ইতিবাচক কথা বলি। তারা যত কথাই বলুক,বিএনপি নির্বাচনে আসবে। আমরা এমন পরিবেশ সৃষ্টি করব, নির্বাচন কমিশন এমন পরিবেশ সৃষ্টি করবে। সরকারি দল হিসেবে আমরা,মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমনভাবে নিশ্চয়তা দেবেন,নির্বাচনের আগে সেই পরিবেশ সৃষ্টি হবে এবং বিএনপি নির্বাচনে আসবে। আমরা যদি এখনো নেতিবাচক কথা বলি যে,দেশে বিপর্যয় হবে। নির্বাচন হবে না। এটা কিন্তু ঠিক হবে না। আমাদের পক্ষ থেকে এবং আমরাও যেন নির্বাচনের বিষয়ে ইতিবাচক কথা। যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ড.হাছান মাহমুদ বলেন,আমরা সরকারে আছি। কিন্তু এই সংলাপে এসেছি দল হিসেবে। নির্বাচন কমিশনের ভাবমূর্তি আছে এবং অংশগ্রহণ সব নির্বাচনে ৬০ ভাগের বেশি,৭০ শতাংশ। কাজেই পার্টিসিপেশন নেই এটা কে বলে! জনগণের অংশগ্রহণ আছে। নির্বাচন কমিশনের ওপর জনগণের আস্থা আছে বলে তারা ব্যাপকভাবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। আওয়ামী লীগবিরোধীরাও অনেক নির্বাচনে জয়লাভ করছে। সুতরাং নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থা আছে। সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল সংলাপে অংশ নেয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু,সভাপতিমন্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী,কাজী জাফর উল্লাহ,ড.মো.আবদুর রাজ্জাক,লে.কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্পু,যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ড.হাছান মাহমুদ,প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড.আবদুস সোবহান গোলাপ,তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড.সেলিম মাহমুদ,দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক বেগম শামসুন নাহার প্রমুখ। আওয়ামী লীগের সংলাপে সমাপনী বক্তব্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন,আরেকটা বিষয়ে সংকট থেকে যাবে, সেটা হলো ইভিএম। ইভিএম নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে সমর্থন পেয়েছি। অধিকাংশ দল ইভিএম বিশ্বাস করছে না। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক পরিমন্ডলে অতিমাত্রায় সমালোচনা ও তর্ক-বিতর্ক হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের সমালোচনাও তীব্র ও তিক্ত। আমরা নিরপক্ষ থেকে অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করে সমালোচনা ও বিতর্কের ঊর্ধ্বে থাকতে চাই। নির্বাচন কমিশনের এ সংলাপে ১৭ জুলাই থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত ২৮টি দল অংশ নেয়। সংলাপে অংশ নেয়নি বিএনপি,সিপিবি,বাসদ,বাংলাদেশ মুসলিম লীগ-বিএমএল,বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি,জেএসডি,এলডিপি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ,বিজেপি। বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ও জাতীয় পার্টি-জেপি পরবর্তীতে সময় চেয়েছে।

আওয়ামী লীগের প্রস্তাবঃ
নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা,নিরপেক্ষতা ও গ্রহণযোগ্যতা ঊর্ধ্বে রেখে সংবিধান ও আইনে প্রদত্ত দায়িত্ব পালনে সক্ষমতা প্রদর্শন নির্বাচনকালীন সময়ে নির্বাহী বিভাগের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/সংস্থার দায়িত্বশীলতা নির্বাচন কমিশন সচিবালয় এবং এর মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা/কর্মচারীদের দায়িত্বশীল ও নিরপেক্ষ আচরণ। এটি সর্বজনস্বীকৃত, আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য সব সরকারের সময় নির্বাচন কমিশনকে দলীয়করণ করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনে একদিকে যেমন সাংবিধানিক পদে দলীয় আনুগত্যের ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল,অন্যদিকে বিএনপি-জামায়াত অশুভ জোট সরকারের সময় কর্মকর্তা পর্যায়ে হাওয়া ভবনের মাধ্যমে এক বিপুলসংখ্যক দলীয় ব্যক্তিকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এসব দলীয় ব্যক্তি এখন নির্বাচন কমিশনের আওতাভুক্ত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রয়েছেন। নির্বাচনকে নিরপেক্ষ ও প্রভাবমুক্ত রাখার লক্ষ্যে এ বিষয়ে কমিশনকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এ ছাড়া বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার তাদের আমলে দলীয়করণের অংশ হিসেবে পুলিশসহ সিভিল প্রশাসনে ব্যাপকভাবে দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়োগ করেছিল। এদের অনেকেই এখন জেলা পর্যায়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত অথবা দায়িত্ব পাওয়ার জন্য অপেক্ষমাণ। এই দলীয় কর্মকর্তাদের তালিকা প্রস্তুতপূর্বক তাদের সব ধরনের নির্বাচনী দায়িত্ব থেকে বাইরে রাখতে হবে। ছবিযুক্ত একটি নির্ভুল ভোটার তালিকা এবং ভোট গ্রহণের দিন কেন্দ্রের সার্বিক নিরাপত্তা। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএমের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ বৃদ্ধি করা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতন্ত্রের দেশ ভারতের মতো প্রযুক্তির মাধ্যমে ভোট ডাকাতি ও ভোট কারচুপি বন্ধ করতে ইভিএমের কোনো বিকল্প নেই। ইভিএম পদ্ধতি ব্যবহারের শুরুর দিকে কিছু ভোটারের অপছন্দ থাকলেও সময়ের পরিক্রমায় প্রমাণিত হয়েছে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ভোট ডাকাতি,কেন্দ্র দখল,ভোট কারচুপি এসব বন্ধ করে একটি টেকসই স্বচ্ছ নির্বাচন পদ্ধতি বাস্তবায়ন ইভিএম ব্যবস্থায়ই সম্ভব। বর্তমান সরকারের অব্যাহত সহায়তা ও নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ায় নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে এখন ১ লাখ ৫০ হাজারের অধিক ইভিএম মেশিন রয়েছে,যা দিয়ে মোট ৪৩ হাজার ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ১৩ হাজার কেন্দ্রে,অর্থাৎ শতকরা মাত্র ৩১ শতাংশ কেন্দ্রে ইভিএমের মাধ্যমে ভোট নেওয়া সম্ভব। আগামী নির্বাচনে ইভিএম মেশিনের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি করতে হবে। বেসরকারি সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পরিবর্তে প্রজাতন্ত্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রিসাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসার পদে নিয়োগ করা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত সদস্যদের নিরপেক্ষ ও দায়িত্বশীল আচরণ। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন দেশি ও বিদেশি পর্যবেক্ষক নিয়োগে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা ও সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। প্রচলিত আইন ও বিধিবিধান অনুযায়ী কোনোভাবেই কোনো দল বা প্রার্থীর প্রতি অনুগত বা কোনোভাবে সম্পর্কযুক্ত হিসেবে পরিচিত বা চিহ্নিত ব্যক্তি,গোষ্ঠী বা সংস্থাকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব প্রদান করা যাবে না। নির্বাচনে পেশিশক্তি ও অর্থের প্রয়োগ বন্ধ এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়সহ সব পর্যায়ের ভোটারের অবাধ ভোটদানের সুযোগ নিশ্চিত করা। নির্বাচনের আগে ও পরে সর্বসাধারণের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময়ে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ নির্বাচন পরিচালনার জন্য আবশ্যকীয় সব সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানকে নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে ন্যস্ত করা। নির্বাচনকালীন সরকারের কর্মপরিধি কেবল আবশ্যকীয় দৈনন্দিন (রুটিন) কার্যাবলির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকা। অ্যাডহক বা অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থার পরিবর্তে টেকসই সাংবিধানিক,আইনি ও রেগুলেটরি ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করা। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা একটি পাস্ট অ্যান্ড ক্লোজড চ্যাপ্টার। দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ এই ব্যবস্থাকে অসাংবিধানিক ও অবৈধ ঘোষণা করেছে। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১১১-এর বিধান অনুযায়ী এ বিষয়ে অন্য কোনো কর্তৃপক্ষের ভিন্ন কোনো সিদ্ধান্ত দেওয়ার এখতিয়ার নেই। এ বিষয়ে সাংঘর্ষিক কোনো মন্তব্য করা সংবিধান লঙ্ঘন করার শামিল। এই প্রস্তাবগুলো তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন,আওয়ামী লীগ দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য দীর্ঘ সংগ্রাম করেছে। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ সাংবিধানিক রেগুলেটরি কমিশন নির্বাচন কমিশনকে সর্বাত্মক সহায়তা করবে। সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালসহ চার নির্বাচন কমিশনার সংলাপে সুষ্ঠু নির্বাচনে কমিশনের নেওয়া পদক্ষেপের পাশাপাশি সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন।

ইভিএম নিয়ে পুরো ঐকমত্য নেই,স্বাধীনভাবে ইসি সিদ্ধান্ত নেবেঃ

সংলাপে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল জানান,সংলাপে কিছু বিষয় উঠে এসেছে। অনেক দল মনে করছে এক দিনে নির্বাচন করা সমীচিন হবে না। ভারতের মতো পৃথক দিনে হওয়া উচিত। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অপ্রতুলতার কথা কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে তারা। অনেকে বলেছেন সেনাবাহিনী মোতায়েন করার জন্য। সেনাবাহিনীর প্রতি জনমানুষের আস্থা অনেক বেশি বলে তারা মনে করছেন। ইসি কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। তিনি বলেন,আরেকটা বিষয়ে সংকট থেকে যাবে,সেটা হলো ইভিএম। ইভিএম নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে সমর্থন পেয়েছি। অধিকাংশ দল ইভিএম বিশ্বাস করছে না। এর ভিতরে কী জানি একটা আছে। ইভিএম নিয়ে আমাদের যে অনুভূতি তা আমরা ব্যবহার করেছি। ফলাফল ৭১ শতাংশ পর্যন্ত ভোট কাস্ট করেছে। কিন্তু আমরা অনেককেই আস্থায় আনতে পারছি না। ইভিএম নিয়ে সহযোগিতা চাইব যে একটা সংকট থাকবেই। কিন্তু পুরোপুরি ঐকমত্য নেই। আমরা সিদ্ধান্ত নেব স্বাধীনভাবে। সংবিধান ও বিধিবিধান অনুসারে নির্বাচন কমিশন তার দায়িত্ব পালন করবে বলে আশ্বস্ত করে কমিশন। সরকার,দল ও সবার সহযোগিতায় অংশগ্রহণমূলক,অবাধ,নিরপেক্ষ ভোট করার প্রত্যাশার কথা জানান তিনি।

বিতর্কের ঊর্ধ্বে থাকতে চান সিইসিঃ

আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংলাপে সমাপনী বক্তব্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল জানান, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক পরিমন্ডলে অতিমাত্রায় সমালোচনা ও তর্ক-বিতর্ক হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের সমালোচনাও তীব্র ও তিক্ত। আমরা নিরপেক্ষ থেকে অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করে সমালোচনা ও বিতর্কের ঊর্ধ্বে থাকতে চাই। কাজী হাবিবুল আউয়াল জানান,অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করা কমিশনের সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ দায়িত্ব। একইভাবে সরকারের কমিশনকে সহায়তা করা সরকারের সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ দায়িত্ব।

নির্বাচন পদ্ধতির পরিবর্তন চায় জাতীয় পার্টিঃ

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিদ্যমান পদ্ধতির পরিবর্তন চায় জাতীয় পার্টি। সেই সঙ্গে নির্বাচনে অনিয়ম-দুর্নীতি রোধে ভোটের দিন সকালে কেন্দ্রে কেন্দ্রে ব্যালট পেপার পাঠানো,নির্বাচনী ব্যয় দ্বিগুণ করে ৫০ লাখ টাকা করার প্রস্তাব করেছে দলটি। ইভিএম পদ্ধতিতে জনগণের আস্থা নেই বলেও সংলাপে নিজের মতামত ব্যক্ত করেন দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। গতকাল সকালে নির্বাচন ভবনে রাজনৈতিক দলের সংলাপে অংশ নেয় জাপা। নির্বাচন কমিশনকে দোষারোপ করতে চান না মন্তব্য করে দলটির মহাসচিব জানান,সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে কিছু ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যের প্রয়োজন রয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল আশ্বস্ত করেছেন,অংশগ্রহণমূলক ভোট আয়োজনের সর্বাত্মক চেষ্টা করবেন তারা। এ ক্ষেত্রে দলগুলোর সহায়তা চান তিনি। সকালে ইসির সম্মেলন কক্ষে প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী সংলাপে ১৪ সদস্যের প্রতিনিধি অংশ নেন। এ সময় সিইসি ও নির্বাচন কমিশনাররা দলের বক্তব্যের বিপরীতেও কথা বলেন। নির্বাচনের মাঠে নানা ধরনের চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরে উপজেলা পর্যায় থেকে ব্যালট পেপার সকালে কেন্দ্রে পাঠানোর পরামর্শ দেন জাপা মহাসচিব। মুজিবুল হক চুন্নু বলেন,একটা প্ল্যান করে করা যায়-ব্যালট পেপার সকালে চলে যাবে। তাহলে রাতের বিষয়টা আর আসে না। রাতে কিন্তু এটা (ভোট কারচুপি) হয়। হয় মানে কী (সহাস্যে),আমরাই করেছি, কী বলব-হয়ই এ রকম হয়। হয় না তা ঠিক না। তিনি বলেন,সার্বিকভাবে মূল্যবোধ নষ্ট হয়ে গেছে। পলিটিক্যাল নয়,সব জায়গায়। নির্বাচনের বিষয়টা যদি বলি,ভোট কেনার বিষয়টা সহজ। কিনতেই পারে। আপনি পারবেন না,যদি সিস্টেম করে আটকান। কিনল,কেউ বলল- রাতের বেলা কিছু ব্যালট ভরে গেল,হয় কি,মেইন ক্যান্ডিডেট থাকেন দু-তিনজন। ইউনিয়ন কাউন্সিলে সমস্যা হয় না। দু-তিনজন ক্যান্ডিডেট হলে সরাসরি কন্ট্রোল করা সম্ভব নয়। তার মতে,যার টাকা আছে তারা এ কাজগুলো করে। ব্যালট পেপারটা যদি ভোরে পাঠানো যায় তাহলে অন্তত করাপশনটা আংশিকভাবে এখানে কমবে। নির্বাচনের বিষয়ে ইসি কেন,ফেরেশতা এলেও কিছু করতে পারবে না। কারণ পলিটিক্যাল পার্টিগুলো যদি চেঞ্জ না হয়,নেতারা সহযোগিতা না করেন তাহলে সম্ভব নয়। আপনাদের দোষারোপ করা সহজ,কথা বলতে পয়সা লাগে না। তাই সবাই কথা বেশি বলে।

পদ্ধতি পাল্টাতে হবে,দলের সহযোগিতা দরকারঃ

জাতীয় পার্টির তরফ থেকে ইসিকে দোষারোপ করা হয় না উল্লেখ করে জাপা মহাসিচব বলেন,আমরা জানি, ইলেকশন সিস্টেমটাই এখানে সমস্যা। রাজনৈতিক দলগুলোর কিছু বিষয়ে ঐকমত্য প্রয়োজন। দলগুলো নির্বানকে সুষ্ঠু করার বিষয়ে কিছু ক্ষেত্রে ঐকমত্য যদি না হয় আপনারা পারবেন না। যতই আইন করেন না কেন,এটা সাময়িকভাবে চেষ্টা করতে পারেন। জাতীয় পার্টির প্রতিনিধিদলে আলোচনায় অংশ নেন দলের কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা,অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম,প্রেসিডিয়াম সদস্য সাহিদুর রহমান টেপা, ফখরুল ইমাম,শামীম হায়দার পাটোয়ারী,মীর আবদুস সবুর আসুদ,শফিকুল ইসলাম সেন্টু,অ্যাডভোকেট মো. রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া,লিয়াকত হোসেন খোকা, জহিরুল ইসলাম জহির,মোস্তফা আল মাহমুদ,ভাইস চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন ভূঁইয়া,যুগ্ম মহাসচিব গোলাম মোহাম্মদ রাজু। জাপার সংলাপে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল সমাপনী বক্তব্যে বলেন,আপনি সিস্টেম পরিবর্তনের কথা বলেছেন। এটাও বলেছেন,বাস্তবে নির্বাচন অনুষ্ঠান করা কঠিন কাজ বিদ্যমান অবস্থায়। তিনি জানান,সংবিধান,আইন-বিধিবিধান প্রয়োগ করবে কমিশন। সরকার সহযোগিতা করবে। মাঠে শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বিতার লক্ষ্যে জাপা ৩০০ আসনে প্রার্থিতা দেবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।



Our Like Page