বিশেষ প্রতিনিধিঃ :
সিলেটে স্ননকালের চলমান সর্বগ্রাসী বন্যায় ব্যাপক ক্ষতি করেছে স্বাস্থ্যখাতেও। সিলেট বিভাগের সাধারণ মানুষের সর্ববৃহৎ স্বাস্থ্যসেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বন্যা পানি ঢুকে নষ্ট করে দিয়েছে গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার বিভিন্ন যন্ত্রপাতি।
গত ১৮ জুন সিলেটে দেড়ঘন্টার অতি ভারী বর্ষণে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ৮০ ভাগ এলাকা পানিতে ডুবে যায়। এসময় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং সিলেট শহীদ শামসুদ্দীন আহমেদ হাসপাতালের নিচতলা প্রায় তিনফুট পানিতে তলিয়ে যায়। ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জেনারেটর জলমগ্ন হওয়ায় হাসপাতালের বিকল্প বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। নিচতলায় পানি উঠে যাওয়ায় চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা পড়েন চরম দুর্ভোগে।
দুদিনে পর বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর দেখা যায়- হাসপাতালটির এম.আর আই, সিটিস্ক্যান ও রেডিও থেরাপি মেশিনে পানি ঢুকে গেছে। ফলে এখন বন্ধ রয়েছে এসব সেবা কার্যক্রম।এতে করে চিকিৎসা নিতে আসা রুগীরা পড়েন চরম দর্ভোগে।অসুস্থ রুগীরা পরীক্ষা করাতে যেতে হচ্ছে বাহিরের প্রাইভেট প্যাথলজি পরীক্ষাগারে এতে করে রুগীদের গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা।
এবারের বন্যায় শুধু ওসমানী হাসপাতালেই নয়, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিভাগের অনেক সরকারি হাসপাতাল,স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও কমিউনিটি ক্লিনিক। ফলে বিভাগজুড়ে স্বাস্থ্যসেবা বিঘ্নিত হচ্ছে। সাধারণ মানুষ চিকিৎসা নিতে এসে পড়ছেন নানা বিপাকে।
বন্যায় আক্রান্ত স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের তথ্যাদি সংক্রান্ত প্রতিবেদনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর উল্লেখ করে- সিলেট বিভাগের মোট ৪০টি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মধ্যে ২৪টি বন্যাকবলিত হয়েছে। ৮৫ টি ইউনিয়ন সাব-সেন্টারের মধ্যে ৩১টিতে পানি ঢুকেছে। সুনামগঞ্জে ২০ শয্যার দুটি হাসপাতালে পানি প্রবেশ করে। এছাড়াও ৯শ ২৭ টি কমিউনিটি ক্লিনিকের মধ্যে ৪১৪টি ক্লিনিক পানিতে নিমিজ্জিত হয়।
সিলেট জেলার ৩টি উপজেলা (জৈন্তাপুর,বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জ) বাদ দিয়ে বাকি ১০টি উপজেলার সকল স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণভাবে জলমগ্ন ছিল। কোম্পানীগঞ্জ এবং গোয়াইনঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রায় ১০ ফুট পরিমাণ পানি ছিল। স্রোতের কারণে অনেক আসবাবপত্র ও ভেসে গেছে এসব প্রতিষ্ঠানের।ফলে এসব চিকিৎসা কেন্দ্রে চিকিৎসা নিতে আসা রুগী ও চিকিৎসকদের পড়তে হবে বিপাকে।
সিলেট স্বাস্থ্য বিভাগের প্রাথমিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সকল উপদ্রুত স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। অনেক স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি, ইপিআই আইএলআর ফ্রিজ, প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা নিরীক্ষার যন্ত্রপাতি, এক্সরে মেশিন, এমএসআর সহ অনেক সামগ্রী নষ্ট হয়ে গেছে। জলমগ্ন এসব যন্ত্রপাতি কতটা সচল কিংবা অচল তা এই মুহুর্তে যাচাই করা যাচ্ছে না। সার্বিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানাতে আরো কিছুটা সময় লাগবে।
সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্র জানায়, হাসপাতালটির নিচতলা পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হাসপাতালের নিচতলায় থাকা এম.আর.আই, সিটি স্ক্যান ও রেডিওথেরাপি মেশিন জলমগ্ন ছিল।তবে রেডিওথেরাপি মেশিনটি চালুর চেষ্টা চলছে। তবে এমআরআই, সিটি স্ক্যান মেশিনের ক্ষতি হয়েছে বেশি। এগুলো ঠিক হবে কি না এখনই বলা যাচ্ছে না।এটা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। ফলে সাধারণ রোগীরা সিটিস্ক্যান, এমআরআই, রেডিও থেরাপি সেবা প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বাইরে থেকে এসব পরীক্ষা করিয়ে নিয়ে আসতে হচ্ছে সাধারণ রুগীদের কে।এতে করে চিকিৎসা নিতে আসা রুগীরাও পড়ছেন বিপাকে। এছাড়াও হাসপাতালের এম্বুল্যান্স,পরিচালকের গাড়িসহ গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো নষ্ট হয়েছে। পুরোপুরি ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনও নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি। তবে আমরা চেষ্টা করছি যতটা তাড়াতাড়ি সম্ভব বিকল হয়ে পড়া মেশিনারি জিনিস পত্র সচল করার যাতে করে সাধারণ মানুষ চিকিৎসা নিতে এসে দূর্ভোগ পোহাত না হয়। আমরা আশাবাদী খুব দ্রুত সময়ে এই সংকট কেটে উঠতে পারবো।আবারও আগের মতো সাধারণ মানুষ চিকিৎসা নিতে আসা রুগীরা সস্থীরতা ফিরে পারেন। আমরা ও সঠিকভাবে চিকিৎসা সেবা দিতে পারবো তাদের কে।