বিশ্বে প্রথম জীবন্ত মানুষের শরীরে শূকরের কিডনি প্রতিস্থাপন – Channel One BD
মঙ্গলবার, ১০ জুন ২০২৫, ০৪:৩৮ পূর্বাহ্ন
ব্রেকিং নিউজঃ
টাঙ্গাইল নাগরপুরের বেলতৈলে ফুটবল ফাইনাল টুর্নামেন্ট’২৫ অনুষ্ঠিত টাঙ্গাইলের দেলদুয়ারে ঈদ পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময়ে ব্যস্ত সময় পার করলেন জননেতা মোঃ শরীফুল ইসলাম স্বপন বানিয়াচং উপজেলায় দুপক্ষের সংঘর্ষে একজন নিহতের ঘটনায় উসমান নামের একজন গ্রেফতার মিশিগানে ঈদ সাবেক তালামীযের দায়িত্বশীল নিয়ে ঈদ পূর্ণমিলনীয় অনুষ্ঠান সম্পন্ন পবিত্র ঈদুল আযহা আপনাদের জীবনে বয়ে আনুক অনাবিল সুখ, শান্তি ও আনন্দের ঘনঘটা- ওসি মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম ঈদুল আযহা কেবল একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি একটি আত্মত্যাগের প্রতীক- জননেতা মোঃ হাবিবুর রহমান হবি পবিত্র ঈদুল আযহা সকলের জীবনে বয়ে আনুক অনাবিল সুখ শান্তি ও আনন্দের ঘনঘটা- জননেতা মীর আবুল কালাম আজাদ রতন পবিত্র ঈদুল আযহার কোরবানির এই ত্যাগের মাধ্যমে প্রিয় বাংলাদেশ থেকে মুছে যাক সকল অপশক্তি – জননেতা মোঃ মাইনুল আলম খান কনক ত্যাগের মহিমায় উজ্জীবিত পবিত্র ঈদুল আযহা সকলের জীবনে বয়ে আনুক অনাবিল সুখ, শান্তি ও আনন্দের ঘনঘটা – জননেতা মোঃ শরীফুল ইসলাম স্বপন মহান আল্লাহর প্রতি গভীর আনুগত্য ও সর্বোচ্চ ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর পবিত্র ঈদুল আযহা- জননেতা মোঃ আতিকুর রহমান আতিক

বিশ্বে প্রথম জীবন্ত মানুষের শরীরে শূকরের কিডনি প্রতিস্থাপন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

বিশ্বে প্রথমবারের মতো জীবন্ত কোনও রোগীর শরীরে শূকরের একটি কিডনির সফল প্রতিস্থাপন করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একদল চিকিৎসক। যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতালে ওই রোগীর শরীরে শূকরের কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়েছে বলে বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) ঘোষণা দিয়েছেন তারা।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলেছে,কিডনি রোগে ভুগছেন ৬২ বছর বয়সী এমন এক ব্যক্তির শরীরে চার ঘণ্টা ধরে অস্ত্রোপচার করে কিডনিটি প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। ওই ব্যক্তি কিডনি রোগের একেবারে শেষ পর্যায়ে রয়েছেন।

বোস্টনের চিকিৎসকরা বলেছেন,তারা শূকরের একটি কিডনিতে জিনগত পরিবর্তন এনে ওই রোগীর শরীরে তা প্রতিস্থাপন করেছেন। ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতাল বলেছে,বিশ্বে তারাই প্রথমবারের মতো শূকরের কিডনি জীবিত মানুষের শরীরে প্রতিস্থাপন করেছে।

তবে কয়েক বছর আগে শূকরের একটি কিডনি ব্রেইন-ডেড বা ক্লিনিক্যালি ডেড একজন মানুষের শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল। এছাড়াও শূকরের হৃদযন্ত্র দু’জন পুরুষের শরীরে ট্রান্সপ্ল্যান্ট করা হয়েছিল। যদিও হার্ট ট্রান্সপ্ল্যান্টের কয়েক মাসের মধ্যেই ওই দুই ব্যক্তি মারা যান।

ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে,চলতি মাসের শুরুর দিকে ওই রোগীর শরীরে শূকরের কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়। বৃহস্পতিবার চিকিৎসকরা বলেছেন,রিচার্ড রিক স্লেম্যান নামের ম্যাসাচুসেটসের ওয়েমাউথের বাসিন্দা ওই রোগী ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছেন। শিগগিরই তাকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।

হাসপাতালের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে,এর আগে ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের একটি হাসপাতালে স্লেম্যানের একটি কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল। কিন্তু গত বছর তার সেই কিডনিটি বিকল হয়ে যাওয়ার লক্ষণ দেখা দেয়। পরে ডায়ালাইসিস নেওয়া শুরু করেন তিনি। ডায়ালাইসিসের কারণে শরীরে জটিলতা তৈরি হওয়ায় চিকিৎসকরা তাকে শূকরের কিডনি প্রতিস্থাপনের পরামর্শ দেন।

স্লেম্যান বলেছেন,আমি এটাকে কেবল আমার নিজের জন্য সহায়তার উপায় হিসেবে দেখছি না। বরং এটা হাজার হাজার মানুষকে আশান্বিত করার একটি উপায়,যাদের বেঁচে থাকার জন্য কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট প্রয়োজন।

চিকিৎসকদের এই ঘোষণা জেনোট্রান্সপ্ল্যান্টেশনের যুগান্তকরী এক সফলতা হিসেবে দেখা হচ্ছে। প্রাণীকূলের শরীরের কোষ,টিস্যু বা অঙ্গ দিয়ে মানুষের রোগ নিরাময়ে যুগের পর যুগ ধরে চিকিৎসকরা যে চেষ্টা চালিয়েছেন,তারই উল্লেখযোগ্য সাফল্য বলে প্রশংসা করেছেন অনেকে।

কয়েক দশক ধরে চিকিৎসকরা চেষ্টা চালালেও মানুষের শরীরে শূকরের কিডনি কাজ করেনি। বরং মানুষের শরীরের ইমিউন সিস্টেম তাৎক্ষণিকভাবে অন্য প্রাণীর টিস্যু ধ্বংস করে ফেলে। সম্প্রতি শূকরের অঙ্গ-প্রতঙ্গ নিয়ে মানুষের শরীরে প্রতিস্থাপনের বেশ কিছু প্রচেষ্টা চালিয়েছেন চিকিৎসকরা। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নেওয়ার আগে জিনগত পরিবর্তন এনে শূকরের জন্ম দেওয়া হয়, যাতে তাদের অঙ্গগুলো মানুষের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের মতো হয়।

এর আগে,২০২১ সালের অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের একদল চিকিৎসক মানবদেহে শূকরের কিডনি প্রতিস্থাপন করে অনন্য এক সফলতা পান। তবে সেটি করা হয়েছিল ক্লিনিক্যালি ডেড ঘোষণা করা এক নারীর শরীরে। একদিন জীবন-রক্ষাকারী কিডনি প্রতিস্থাপনে মানুষের শরীরে প্রাণীর কিডনি সফলতার মুখ দেখবে বলে গত কয়েক দশক ধরে চিকিৎসকরা যে প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছিলেন,নিউ ইয়র্কের চিকিৎসকরা সেই প্রচেষ্টায় প্রথম সফলতা পান।

ওই সময় চিকিৎসকরা বলেছিলেন,শূকরের একটি জিন পাল্টে দিয়েছিলেন তারা। পরে পরিবর্তিত জিনে নতুন শূকরের জন্ম দিয়ে সেটি বড় করে তোলেন। এরপর সেই শূকরের কিডনি মানবদেহে প্রতিস্থাপন করে দেখতে পান সেটি স্বাভাবিকভাবেই কাজ করছে।

মানবদেহে অঙ্গপ্রতঙ্গ প্রতিস্থাপনের ঘাটতি মেটাতে বহুকাল ধরেই শূকরের অঙ্গ নিয়ে গবেষণা চলছে। কিন্তু শূকরের শরীরের কোষে বিশেষ এক ধরনের সুগার রয়েছে,যা মানবদেহের কাছে আগন্তুক হিসেবে শনাক্ত হয় এবং তাৎক্ষণিকভাবে মানবদেহ তা প্রত্যাখ্যান করে। যে কারণে কিডনি প্রতিস্থাপনের এই পরীক্ষার জন্য চিকিৎসকরা জিন-সম্পাদনা করে শূকরের জন্ম দেন। জিন সম্পাদনা করে শূকরের শরীর থেকে সেই সুগার ফেলে দেওয়া হয়। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যাতে আক্রান্ত না হয় সেজন্য শূকরের জিন সম্পাদনা করা হয়।

জটিল ওই অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়েছিল নিউ ইয়র্ক সিটির এনওয়াইইউ ল্যাংগোন হেলথ হাসপাতালে। চিকিৎসকরা ব্রেইন ডেড এক নারীর শরীরের বাইরে এক জোড়া বড় রক্তনালীর সাথে শূকরের কিডনি সংযুক্ত করে দিয়েছিলেন। এরপর চিকিৎসকরা দু’দিন ধরে ওই কিডনি প্রতিস্থাপন পর্যবেক্ষণ করেন।

এতে দেখা যায়,কিডনির যেভাবে কাজ করার কথা ছিল,ঠিক সেভাবেই কাজ করছে। মানুষের কিডনি যে পরিমাণ বর্জ্য পরিশোধন করে মূত্র নিষ্কাশনে সহায়তা করে শূকরের কিডনিও একই কাজ করছে এবং তা মানবদেহ প্রত্যাখ্যান করেনি। অস্ত্রোপচারের পর চিকিৎসকরা সেই সময় বলেছিলেন,কিডনি গ্রহীতার শরীরে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা অস্বাভাবিক ছিল। তবে কিডনি প্রতিস্থাপনের পর তা স্বাভাবিক হয়ে যায়।

এনওয়াইইউ ল্যাংগোন হেলথ হাসপাতালে কিডনি প্রতিস্থাপনে চিকিৎসক দলের নেতৃত্বে থাকা ডা. রবার্ট মন্টগোমারি জানান,এটা পুরোপুরি স্বাভাবিক কাজ করেছে। আমরা তাৎক্ষণিকভাবে মানবদেহে এটার প্রত্যাখ্যাত হওয়া নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকলেও সেটি হয়নি।

পশুর থেকে মানুষের শরীরে প্রতিস্থাপনের স্বপ্ন অথবা জেনোট্রান্সপ্ল্যান্টেশনের এই প্রচেষ্টা সতেরো শতকে ফিরিয়ে নিয়ে যায়,ওই সময় পশুর রক্ত মানবদেহে ​​ব্যবহারের এক স্বপ্ন অঙ্কুরেই হোঁচট খেয়েছিল।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বেশ কয়েকটি বায়োটেক কোম্পানি মানবদেহের অঙ্গের ঘাটতি মেটাতে সহায়তা করার জন্য প্রতিস্থাপনের উপযুক্ত শূকরের অঙ্গ তৈরির কাজ করে চলেছে। যুক্তরাষ্ট্রে ৯০ হাজারেরও বেশি মানুষ কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য অপেক্ষার প্রহর গুণছেন। দেশটিতে গড়ে প্রতিদিন কিডনি প্রতিস্থাপনের অপেক্ষায় থাকা অন্তত ১২ জন মারা যান।

সূত্র: এএফপি,এপি।



Our Like Page