শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:০০ অপরাহ্ন
ব্রেকিং নিউজঃ
প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদে নাগরপুর উপজেলা বিএনপি’র সাংবাদিক সম্মেলন ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা পেল সেনাবাহিনী নাগরপুরে শহীদ ক্যাডেট স্কুলে কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা ও অভিভাবক সমাবেশ অনুষ্ঠিত ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, নাগরপুর উপজেলা শাখার উদ্যোগে গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত জয়তুন ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের উদ্যোগে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ “জনতার সময়” অনলাইন নিউজ পোর্টালের সম্পাদক হলেন কাজী মোস্তফা রুমি ডুমুরিয়ায় ক্লাইমেট স্মার্ট প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃষক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত নোয়াখালীতে সি‌লেট-চট্টগ্রাম ফ্রেন্ড‌শীপ ফাউ‌ন্ডেশনের মে‌ডি‌কেল ক্যাম্প অনু‌ষ্ঠিত জাতিসংঘের অধিবেশনে প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী ৭ জন আইওআই(IOI) তে বাংলাদেশের প্রথম স্বর্ণ পদক লাভ করেছেন সিলেটের দেবজ্যোতি দাস সৌম্য

হরিপুরের গ্যাস কিন্তু ৬৭ বছর যাবৎ গ্যাস সংযোগ নেই জৈন্তায়!

ফারহানা বেগম হেনাঃ

খনিজসম্পদে সমৃদ্ধ সিলেট জেলার জৈন্তিয়া উপজেলা। খনিজ সম্পদের নামের সাথে মিল রেখে বলতে হয় এই অঞ্চলের অন্যতম একটি গোলাপ খনিজসম্পদ। জৈন্তিয়া উপজেলায় অসংখ্য তেল ও গ্যাস কূপ রয়েছে যা উক্ত উপজেলার জনগণের জন্য নিয়ামত। কিন্তু দুঃখের কথা হলেও সত্য,উপজেলার প্রায় ৮০ ভাগ এলাকাবাসী জ্বালানি গ্যাস থেকে এখনও বঞ্চিত। এছাড়া উক্ত উপজেলা প্রবাসী অধ্যুষিত এলাকা হিসেবে পরিচিত। আর্থিকভাবে মোটামুটি সচ্ছল থাকার পরও জ্বালানি গ্যাসের শূন্যতায় সামাজিক ভাবে অনেকটা দুর্বল হয়ে রয়েছে উপজেলাটি।

উল্লেখ্য,হরিপুর এলাকায় বাংলাদেশের প্রথম প্রাকৃতিক গ্যাস ১৯৫৫ সালে এবং দেশের একমাত্র তেল খনি আবিষ্কৃত হয় ১৯৮৬ সালের ২৪ ডিসেম্বর। ১৯৬২ সালে হরিপুর থেকে বাণিজ্যিকভাবে গ্যাস উত্তোলন ও ১৯৭৮সালে হযরত শাহজালাল(রঃ)-এর মাজারে গ্যাস শিখা জ্বালিয়ে সিলেট শহর এলাকার বাসা-বাড়ীতে এবং বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে গ্যাস সরবরাহ কার্যক্রম শুরু করা হয়। ১৯৮৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর হতে হরিপুর থেকে তেল উৎপাদন শুরু করা হয়।

গ্যাস ও খনিজ তেল আবিষ্কৃত হলেও বৃহত্তর জৈন্তিয়া এলাকাবাসী আজও গ্যাস সুবিধা পাননি। জৈন্তাপুর,গোয়াইনঘাট ও কানাইঘাট এই তিন উপজেলা সদর পর্যন্ত গ্যাস লাইন স্থাপনের জন্য দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে আন্দোলন সংগ্রাম করে আসছেন স্থানীয় জনগণ। তারপরও এই এলাকার মানুষ গ্যাস পাননি ।আজও বৃহত্তর জৈন্তিয়াবাসী গ্যাস সুবিধা থেকে বঞ্চিতই রয়ে গেল।

জানা গেছে,সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লি:কোম্পানীর উত্তোলিত গ্যাস বিতরণ ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান জালালাবাদ গ্যাস লি:কোম্পানী সিলেট শহরসহ বিভিন্ন স্থানে শত শত কিলোমিটার দীর্ঘ গ্যাস লাইন স্থাপন করেছে। অথচ হরিপুর পানি ছড়া এলাকা হতে জৈন্তাপুর উপজেলা সদর পর্যন্ত মাত্র ১৯ কিলোমিটারে গ্যাস লাইন স্থাপন করা হয়নি। গ্যাসের দাবিতে স্থানীয় জনগণ আন্দোলন করে আসলেও এখনও তা উপেক্ষিত। বৃহত্তর জৈন্তিয়ার ৬০ ভাগ মানুষ সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহার করেন।

সিলেট জেলার সীমান্তবর্তী চারটি উপজেলা (জৈন্তাপুর,কানাইঘাট,গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ) নিয়ে গঠিত বৃহত্তর জৈন্তিয়া যা ঐতিহাসিকগতভাবে ১৭ পরগনা নামে পরিচিত। এ অঞ্চলের হরিপুর গ্যাসক্ষেত্র থেকে বর্তমানে ৭টি কূপ থেকে নিয়মিত গ্যাস উত্তোলন ও সরবরাহ হচ্ছে। ৯ নং কূপে গ্যাস উত্তোলন প্রক্রিয়াধীন এবং ৮ নং কূপে শীঘ্রই শুরু হবে বলে জানা গেছে। এ অঞ্চল গ্যাস ছাড়াও বালু মহাল ও মানসম্মত পাথরের জন্য সমৃদ্ধ রয়েছে। সৌন্দর্য্যের লীলাভূমি জাফলং,লালাখাল,বিছনাকান্দি, রাতারগুল,সাদাপাথর ও লোভাছড়া পিকনিক স্পটের জন্য দেশের সীমানা পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও এ অঞ্চলের পরিচিতি রয়েছে।

প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর এ অঞ্চলে শিল্পায়নের যথেষ্ঠ সম্ভাবনা রয়েছে। গ্যাস সংযোগ না থাকার কারণে এ অঞ্চলে শিল্পায়নও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এই অঞ্চলে ইপিজেড,ক্ষুদ্র-মাঝারি ও বৃহৎ শিল্প কারখানা গড়ে উঠার সম্ভাবনাও রয়েছে। এসব শিল্প-কারখানা গড়ে উঠলে নতুন নতুন কর্মসংস্থানও গড়ে উঠবে যা বেকারত্ব দূরীকরণে বিরাট ভূমিকা রাখবে। গ্যাস সংযোগ ছাড়াও এ অঞ্চল নানা সমস্যায় জর্জরিত।বিশেষ করে এই অঞ্চলের পর্যটন সম্ভাবনার কারণে স্থানীয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য এবং প্রত্মতত্ত¡ সংরক্ষণ করে বিশেষ আঞ্চলিক পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে তোলার জোর দাবি দীর্ঘ দিনের।

সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ,গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার এবং সুনামগঞ্জের ছাতকে গ্যাস ক্ষেত্র থেকে গ্যাস উত্তোলনের সাথে সাথেই এসব এলাকায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গ্যাস সংযোগ প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু হরিপুর থেকে গ্যাস উত্তোলনের পর বৃহত্তর জৈন্তিয়ার ৪ উপজেলায় গ্যাস সংযোগ না দিয়ে এ অঞ্চলের জনগণের সাথে বিমাতা স্বরূপ আচরন করা হয়েছে।

২০১২ সালে জৈন্তা জনদাবী পরিষদ গ্যাসের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। তিন উপজেলায় সভা সমাবেশ করে এক পর্যায়ে আন্দোলনের নানা কর্মসূচি দেয়া হয়। ওই বছরের ২৯ ফেব্রুয়ারী সাদা কাপড় গায়ে দিয়ে প্রতীকী অনশন পালন ও ১৪ মার্চ বৃহত্তর জৈন্তিয়ায় হরতাল পালন করা হয়। এক পর্যায়ে সিলেট প্রেসক্লাবে ২০১৬ সালের ২০ জানুয়ারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিলেট আগমন উপলক্ষে জৈন্তিয়া শেকড় সন্ধানী গ্রুপ ও জৈন্তাপুর নাগরিক কমিটির আহবানে এক সংবাদ সম্মেলন এর আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে বৃহত্তর জৈন্তিয়া এলাকায় গ্যাস লাইন স্থাপনসহ বিভিন্ন দাবি পেশ করা হয়েছিল। সিলেট-৪ জৈন্তাপুর-গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য বর্তমান প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদও সম্প্রতি জাতীয় সংসদে তাঁর নির্বাচনী এলাকায় গ্যাস সরবরাহের দাবি জানান । তারপরও এখন পর্যন্ত বৃহত্তর জৈন্তিয়াবাসী গ্যাস সুবিধা থেকে বঞ্চিত।



Our Like Page