টানা তিন মাস বন্ধের পর সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের করমজলে বাড়ছে পর্যটকদের ভিড়। – Channel One BD
বুধবার, ১১ জুন ২০২৫, ০৮:৩৫ পূর্বাহ্ন
ব্রেকিং নিউজঃ
ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফিরতে যাত্রী হয়রানি বন্ধে বরগুনায় যৌথ বাহিনীর অভিযান  টাঙ্গাইল নাগরপুরের বেলতৈলে ফুটবল ফাইনাল টুর্নামেন্ট’২৫ অনুষ্ঠিত টাঙ্গাইলের দেলদুয়ারে ঈদ পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময়ে ব্যস্ত সময় পার করলেন জননেতা মোঃ শরীফুল ইসলাম স্বপন বানিয়াচং উপজেলায় দুপক্ষের সংঘর্ষে একজন নিহতের ঘটনায় উসমান নামের একজন গ্রেফতার মিশিগানে ঈদ সাবেক তালামীযের দায়িত্বশীল নিয়ে ঈদ পূর্ণমিলনীয় অনুষ্ঠান সম্পন্ন পবিত্র ঈদুল আযহা আপনাদের জীবনে বয়ে আনুক অনাবিল সুখ, শান্তি ও আনন্দের ঘনঘটা- ওসি মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম ঈদুল আযহা কেবল একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি একটি আত্মত্যাগের প্রতীক- জননেতা মোঃ হাবিবুর রহমান হবি পবিত্র ঈদুল আযহা সকলের জীবনে বয়ে আনুক অনাবিল সুখ শান্তি ও আনন্দের ঘনঘটা- জননেতা মীর আবুল কালাম আজাদ রতন পবিত্র ঈদুল আযহার কোরবানির এই ত্যাগের মাধ্যমে প্রিয় বাংলাদেশ থেকে মুছে যাক সকল অপশক্তি – জননেতা মোঃ মাইনুল আলম খান কনক ত্যাগের মহিমায় উজ্জীবিত পবিত্র ঈদুল আযহা সকলের জীবনে বয়ে আনুক অনাবিল সুখ, শান্তি ও আনন্দের ঘনঘটা – জননেতা মোঃ শরীফুল ইসলাম স্বপন

টানা তিন মাস বন্ধের পর সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের করমজলে বাড়ছে পর্যটকদের ভিড়।

মোঃ মুসা, মোংলা (বাগেরহাট) প্রতিনিধি :

দীর্ঘ তিন মাস বন্ধ থাকার পর খুলে দেওয়া হয়েছে সুন্দরবন। এর ফলে পর্যটক, মৎস্যজীবী ও বনজীবীরা অনুমতি নিয়ে সুন্দরবনে প্রবেশ করতে পারছেন। গতকাল বুধবার রাত ১২টার পর থেকে সুন্দরবনে প্রবেশ সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।

বাংলাদেশে পর্যটনের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হলো সুন্দরবন। অত্যন্ত সম্ভাবনাময় এ শিল্পকে ঘিরে বিকশিত হয়েছে বিভিন্ন দেশের অর্থনীতি। বহুদেশ এ খাতকে আঁকড়ে ধরে সামনে আসার চেষ্টা করছে। একইভাবে পর্যটন শিল্পে বাংলাদেশও অগ্রসরমান।

আমাদের দেশের অনেক জেলাই প্রাকৃতিক বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ও ঐতিহাসিক স্থাপনাকে ঘিরে আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিতি পেয়েছে। এ ক্ষেত্রে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সুন্দরবন উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটের মোংলাও গুরুত্ব ও সম্ভাবনাও কম নয়।

জীববৈচিত্র্য রক্ষা, বন্য প্রাণী ও মাছের প্রজনন মৌসুম হওয়ায় জুন থেকে আগস্ট মাসের শেষ পর্যন্ত এই তিন মাস সুন্দরবনে পর্যটন থেকে শুরু করে সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ রাখে বন বিভাগ। মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত কয়েক বছর থেকে ওই কার্যক্রম চলছে। তিন মাস বন্ধ থাকার পর আজ বৃহস্পতিবার ( ১ সেপ্টেম্বর) সেটি আবার খুলে দেওয়া হয়।

এই তিন মাস বন্ধ থাকার পর সবুজে সবুজে ভরে উঠেছে সুন্দরবন। দেখা মিলছে পশু-পাখির। সুন্দরী, গেওয়া, গরানের বনে এখন সবুজের সমারোহ। বাড়ছে পর্যটকদের ভিড়। বিচরণ বেড়েছে হরিণসহ বন্য প্রাণির।

ভোর থেকেই সুন্দরবনে মাছ ধরতে যাওয়ার আশায় শত শত জেলে পাস (অনুমতিপত্র) নেওয়ার জন্য ফরেস্ট স্টেশনগুলোতে ভিড় করছেন।

পশ্চিম সুন্দরবনের মুন্সীগঞ্জ, কলাগাছিয়া, কটকা, হিরোনপয়েন্ট, হাড়বাড়িয়া, আন্ধারমানিকসহ বিভিন্ন এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত গাছগুলো দীর্ঘ বিশ্রামে যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে। তবে বিভিন্ন কারণে সুন্দরবনও হারাতে বসেছে তার নিজস্বতা। বন এলাকা সংকুচিত হয়ে পড়ছে। কিছু অসাধু মানুষের কারণে এই ম্যানগ্রোভ বন হারাতে বসেছে তার সৌন্দর্য। বিপন্ন হয়ে পড়েছে এর প্রাণীকূল আর বৃক্ষরাজী।

সমস্যার মধ্যেও বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ এ বনে বাড়ছে পর্যটকের সংখ্যা। বনের চাঁদপাই রেঞ্জে বাড়ছে রাজস্ব আদায়।

সুন্দরবন বিশ্বের একক বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন। ১৮৭৮ সালে সুন্দরবনকে সংরক্ষিত বন হিসেবে ঘোষণা করা হয়। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিশাল এলাকাজুড়ে সুন্দরবনের অবস্থান। দুইশ বছর আগে মূল সুন্দরবনের বিস্তৃত ছিল প্রায় ১৬ হাজার ৭০০ বর্গকিলোমিটার। তবে সংকুচিত হতে হতে বর্তমানে আয়তন এসে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১০ হাজার বর্গকিলোমিটারে। সুন্দরবনের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ পড়েছে বাংলাদেশে আর বাকিটা ভারতে। এ হিসেবে সুন্দরবনের বাংলাদেশের অংশ প্রায় ৫ হাজার ৮০০ বর্গকিলোমিটার। এর মধ্যে চার হাজার একশ বর্গকিলোমিটার স্থলভাগ ও এক হাজার ৭০০ বর্গ কিলোমিটার জলাভূমি।

বিশ্বজুড়ে সুন্দরবনের খ্যাতি রয়েল বেঙ্গল টাইগার আর চিত্রল হরিণের জন্য। তবে এখানে বানর, কুমির, হাঙ্গর, ডলফিন, অজগর ও বনমোরগ ছাড়াও রয়েছে কয়েকশ প্রজাতির প্রাণী, পাখি, সরীসৃপ ও দুইশ’রও বেশি প্রজাতির মাছ। এসব বন্য প্রাণী ও সুন্দরবনের নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখতে দেশ-বিদেশের পর্যটকরা ছুটে আসেন।

১৯৯৬ সালে সুন্দরবনের এক লাখ ৩৯ হাজার ৬৯৯ দশমিক ৪৯৬ হেক্টর এলাকা অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হয়। তখন সুন্দরবনের মোট আয়াতনের শতকরা ২৩ ভাগ অভয়ারণ্য ছিল। এর ২১ বছর পর ২০১৭ সালে সরকার সুন্দরবনে অভয়ারণ্য এলাকা সম্প্রসারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। ঐ প্রজ্ঞাপনে নতুন করে বনের আরও এক লাখ ৭৮ হাজার ২৫০ দশমিক ৫৮৪ হেক্টর এলাকা অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়। সব মিলে বর্তমানে সুন্দরবনের মোট তিন লাখ ১৭ হাজার ৯৫০ দশমিক ০৮ হেক্টর এলাকা অভয়ারণ্য। এখন সুন্দরবনের মোট আয়াতনের শতকরা ৫০ ভাগেরও বেশি অভয়ারণ্য এলাকা।

সুন্দরবনের নাম স্বার্থক করতেই রয়েছে সারি সারি সুন্দরী গাছ। এছাড়াও রয়েছে গরান, গেওয়া, কেওরা ধুন্দল, গোলপাতাসহ প্রায় তিনশ প্রজাতির বৃক্ষ।

সম্প্রতি বনে বেড়াতে যাওয়া বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) নেতা সাংবাদিক হাছিব সরদার জানান, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর সুন্দরবনে ঘুরতে যেয়ে অনেক ভালো লেগেছে। অসংখ্য নদী আর খাল জালের মতো জড়িয়ে আছে সুন্দরবনকে। এগুলো সুন্দরবনকে আকর্ষণ করে।

তিনি আরো জানান, সুন্দরবন আসলেই অনেক সুন্দর। কিছু পর্যটকরা নদীতে পানির বোতল, ওয়ান টাইম প্লেট, খাবারের উচ্ছিষ্ট ফেলে। সেগুলো থেকে পরিবেশ নষ্ট করে। দীর্ঘদিন পর্যটক নিষিদ্ধ থাকায় এসব থেকে রক্ষা পেয়েছে পরিবেশ।সবমিলিয়ে এক মনোরম পরিবেশ তৈরি হয়েছে সুন্দরবনে।

বন বিভাগ বলছে, প্রজনন মৌসুমে ৩ মাস সুন্দরবনে সব ধরণের মানুষের প্রবেশ বন্ধ থাকায় বন্যপ্রাণীরা নির্বিঘ্নে প্রজনন করতে পেরেছে। বনে বিভিন্ন ধরণের বন্যপ্রাণীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই সাথে বনের নদী, খালে মাছও বৃদ্ধি পেয়েছে। লোকালয়ের কাছাকাছি এবং বন বিভাগের বিভিন্ন দপ্তরের পাশে হরিণ, বানর, বন্য শুকুর, সাপ, অজগর, ঘুঘুসহ বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণীর দেখা মিলছে। এমনকি বনের বিভিন্ন এলাকায় বাঘের ডাকও শোনা গেছে।

সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন জানান, “বন্যপ্রাণীর প্রজনন মৌসুমে জুন, জুলাই ও আগস্ট এই তিন মাস সুন্দরবনে পর্যটক এবং জেলেসহ সব ধরণের মানুষের প্রবেশ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। সুন্দরবনে তিন মাস প্রবেশ বন্ধ থাকায় বন্যপ্রাণীরা নির্বিঘ্নে প্রজনন করতে পেরেছে। যার সুফল হিসেবে সুন্দরবনে বন্যপ্রাণীর প্রজনন বৃদ্ধি পেয়েছে।”

সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজাদ কবির জানান, দীর্ঘ তিনমাস বন্ধ থাকার পর আজ সুন্দরবন পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। তাছাড়াও জেলে বাওয়ালি যাতের বন্ধ করা ছিলো তাদের আজ পাশ পারমিট নিয়ে বৈধভাবে ঘোরাফেরা করছে। সকাল থেকে বেশ কিছু পর্যটক আসতে শুরু করছে। তারপরেও এ বর্ষা মৌসুমে এতো পর্যটক আশার কথা না। পদ্মা সেতু খুলে দেওয়ায় পর্যটকদের ভিতর একটা ফিলিংস কাজ করছে বর্ষায় সুন্দর পরিবেশে সুন্দরবন দেখার জন্য।



Our Like Page