চ্যানেল ওয়ান বিডি ডেক্সঃ
শেষ মুহূর্তে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে গণহারে পদ দেওয়ায় অসন্তোষ দেখা দিয়েছে সংগঠনটিতে। গত ৩১ জুলাই রাতে কমপক্ষে ৪০০ জনকে বিভিন্ন পদে নতুন করে কমিটিতে জায়গা দেওয়া হয়। ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য স্বাক্ষরিত চিঠি পদ প্রাপ্ত নেতাদের হাতে দেওয়া হয়। এসব পদায়নে সংগঠনের ভিতর থেকেই বাণিজ্যের অভিযোগ তোলা হয়েছে।
এসব পদের মধ্যে সহসভাপতি,বিষয়ভিত্তিক উপসম্পাদক,সহসম্পাদক ও কেন্দ্রীয় সদস্য রয়েছে। গঠনতন্ত্র অনুসারে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি হবে ৩০১ সদস্য বিশিষ্টি। নতুন করে চার শতাধিক পদ দেওয়ায় প্রশ্ন উঠেছে কেন্দ্রীয় কমিটির কলেবর কত সংখ্যার? শোকাবহ আগস্ট মাসের প্রাক্কালে জাতির পিতার হাতে গড়া সংগঠন ছাত্রলীগের এহেন কর্মকাণ্ডে বিস্মিত এ সংগঠনের সাবেক নেতা থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা পর্যন্ত। তারা বলছেন,শেষ মুহূর্তে বাণিজ্যের জোয়ারে নিজেদের আখের গোছাতে গণহারে পদ দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে ছাত্রলীগের সহসভাপতি সৈয়দ আরিফ বলেন,একদিকে কষ্টের আগস্ট। অন্যদিকে বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে নিলামে তুলেছে শীর্ষ দুই নেতা। সংগঠনের ভাবমূর্তি নষ্ট করছেন ইচ্ছে মতো। তারা শোকের মাসও মানছে না। এটা খুবই দুঃখজনক।
ছাত্রলীগ সূত্রে জানা যায়,দীর্ঘদিন ধরেই সংগঠনের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের একক নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। সংগঠন মেয়াদোত্তীর্ণ হলেও দাপটের সঙ্গে কার্যক্রম চালাচ্ছেন তারা। জয়-লেখকের বিরুদ্ধে কমিটি গঠনে অনিয়ম,আর্থিক লেনদেন,সংগঠনে অনুপ্রবেশ ঘটানোসহ বেশ কিছু অভিযোগ দীর্ঘদিনের। হঠাৎ বিভিন্ন ইউনিট কমিটি গঠনের তৎপরতা এবং কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদায়নের বিষয়টি ফের সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। আগস্ট মাসের প্রথম প্রহরেও নতুন করে ছাত্রলীগে পদায়নের ঘোষণা ভালো ভাবে নেননি আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা। এ প্রসঙ্গে জয়-লেখক একাধিকবার ফোন করা হলেও তারা ধরেননি। তবে জয়-লেখকের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত একাধিক সূত্র জানিয়েছেন,ছাত্রলীগের কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে অনেক আগেই। পদপ্রত্যাশী অনেক নেতার বয়স শেষ পর্যায়ে চলে এসেছে। আগামী ডিসেম্বরে সম্মেলন হলে তারা প্রার্থী হতে পারবেন না। তাই শেষ মুহূর্তে তাদের সান্ত্বনা পুরস্কার হিসেবে পদ দেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে ছাত্রলীগের দফতর সম্পাদক ইন্দ্রনীল দেব শর্মা রনি বলেন,৩০১ জনের কমিটিতে ৫০-৫৫ জনের পদ শূন্য ছিল। এই শূন্যপদ পূরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রায় ২৫০ জনকে কমিটিতে বর্ধিত হিসেবে দেখানো হয়েছে। বাণিজ্যের মাধ্যমে কমিটিতে স্থান দেওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন,সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক যেসব নামের সুপারিশ করেছেন,শুধু তাদের নামই অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। টাকা নিয়ে থাকলে তারাই নিচ্ছেন। ছাত্রলীগের একটি সূত্র জানিয়েছে,আগস্ট মাসের শেষ মুহূর্তে প্রায় চার শতাধিক জনকে নতুন করে কেন্দ্রীয় নেতা করে চিঠি ইস্যু করা হয়েছে। এ ছাড়া কমপক্ষে ১০টি সাংগঠনিক জেলা-উপজেলার কমিটির প্রেস রিলিজের মাধ্যমে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এতে বিভিন্ন জেলায় পদপ্রত্যাশী অন্যরা বিক্ষোভ করছেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ দুই দিন ধরে অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে। সূত্রমতে,ছাত্রলীগে গণহারে পদ দেওয়ায় কেউ কেউ ফেসবুকে সুপার এডিট করে প্যাডে তারা নিজের নাম লিখে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য,সহসভাপতি, উপসম্পাদক,সহসম্পাদক হিসেবে দাবি করছেন। এমন একটি ঘটনা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নজরে আসার পর একজনকে গতকাল বহিষ্কার করা হয়েছে। নিজেকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে সদস্য পদে পদায়ন করার দাবি করে ফেসকুকে পোস্ট দেওয়ায় নেত্রকোনা জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদ থেকে রুমিত আয়াত সাদিয়াকে গতকাল বহিষ্কার করা হয়েছে। এর আগে তিনি তাকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে সদস্য মনোনীত করায় ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। বলা হয়েছে,তাকে পদায়ন করেনি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তথ্য উপস্থাপন করা এবং সংগঠনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করায় তাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়। ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ চৌধুরী বলেন,এবার কীভাবে পদায়ন করা হয়েছে! কাদের পদায়ন করা হয়েছে! পদায়নকৃতদের যোগ্যতা কী! কতজনকে পদায়ন করা হয়েছে! এসব কোনো তথ্য কারও কাছে নেই। ছাত্রলীগের সহসভাপতি ইয়াজ আল রিয়াদ বলেন,আগস্ট মাসেও বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য কাণ্ড-জ্ঞানহীন কাজ করেছে। তাদের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য ছাত্রলীগের আত্মমর্যাদা আজ প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।
সম্পাদকঃ মো শফিকুল ইসলাম, নির্বাহী সম্পাদক: কাজী মোস্তফা রুমি, বার্তা সম্পাদকঃ ফারহানা বি হেনা।
বাংলাদেশের বহুল প্রচারিত ও জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল।
Copyright © 2025 Channel One BD. All rights reserved.