চ্যানেল ওয়ান বিডি ডেক্সঃ
গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী গরুর গাড়ী।কালের পরিক্রমায় আধুনিকতার স্পর্শে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী গরুর গাড়ি এখন শুধুই অতীতের স্মৃতি বহণ করে চলেছে। সুজলা-সুফলা,শষ্য,শ্যামলা খ্যাত গ্রাম বাংলার অন্যতম বাহন চলাচলের মাধ্যম জনপ্রিয় ঐতিহ্যবাহি গরুর গাড়ি আজ বিলুপ্তির পথে। নতুন নতুন প্রযুক্তির ফলে মানুষের জীবনযাত্রার উন্নয়ন ঘটছে,পক্ষান্তরে হারিয়ে যাচ্ছে অতীতের এই ঐতিহ্যবাহী গরুর গাড়ি।
গ্রামগঞ্জের আঁকাবাঁকা মেঠো পথে ধীরে ধীরে বয়ে চলা গরুর গাড়ি এখন আর চোখে পড়ে না। যা এক সময় আবহমান বাংলার ঐতিহ্যবাহী বাহন হিসেবে প্রচলিত ছিল এবং গ্রাম বাংলায় গরুর গাড়িই যোগাযোগের একমাত্র বাহন ছিল। এক সময় জনপদের এই বাহনের সরগরম অস্তিত্ব ছিল সর্বত্র কদরও ছিল গরুর গাড়ির খুব বেশি। মাত্র দুই যুগ আগেও পণ্য পরিবহন ছাড়াও বিবাহের বর-কনে বহনের বিকল্প কোন বাহন কল্পনাই করা যেত না। যেসব পরিবারে গরুর গাড়ি ছিল তাদের কদরের সিমা ছিল না।
কৃষকরা প্রতিদিন ফজরের আজানের আগে গরুর গাড়িতে কখনো জৈব সার (গোবর সার) কখনো গরুর খাবার ও লাঙ্গল-মই-জোয়াল নিয়ে মাঠে যেত। সু-প্রাচীনকাল থেকে দেশের গ্রামীন জনপদে যাতায়াত ও মালামাল পরিবহনের ক্ষেত্রে গরুর গাড়ির বহুল প্রচলন পরিলক্ষিত হতো।গ্রাম অঞ্চলে কৃষকের ঘরে নতুন ধান উঠার পর সেই ধান মাড়াই করা হতো গরু বা বলদ দিয়ে এখন ধান মাড়াই করা হয় আধুনিক যন্ত্র চালিত মেশিনের মাধ্যমে।আধুনিকতার ছোয়াঁয় বিলুপ্ত হচ্ছে গরু দিয়ে হালচাষ। পায়ে চলার পথে মানুষ পশুর শ্রমে চালিত গরুর গাড়ি যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ও বাণিজ্যিক পণ্য পরিবহনের প্রধান বাহন হিসেবে ব্যবহার করত প্রাচীনকাল থেকেই। বাংলা এবং বাঙালির ঐতিহ্য গরুর গাড়ি যান্ত্রিক সভ্যতার যুগে এখন অতীত স্নিতির পাতায় যোগ হতে চলেছে। বিভিন্ন উৎসব পার্বণে এটি ছিল অপরিহার্য। আগে অনেকেরই এই গাড়ি ছিল উপার্জনের একমাত্র অবলম্বন। তখন গরুর গাড়ির ব্যাপক চাহিদা ছিল। গ্রামের বউ ঝিদের নাইওর যেতে গরুর গাড়ি ব্যবহৃত হতো অহরহ।
(গাড়িয়াল) না থাকায়,হারিয়ে যাচ্ছে চিরচেনা গাড়িয়াল ভাইয়ের কণ্ঠে সেই অমৃত মধুর সুরের গান। গাড়ি চালানোর সময় আনন্দে গাড়িয়ালরা গাইতো ও কি গাড়িয়াল ভাই কত রব আমি পন্থের দিকে চাইয়া রে..এখন আর চাইয়া থাকলেও গরুর গাড়ি চোখে পড়ে না। আর গানও গায়না গাড়িয়ালরা। আধুনিকতার দাপটে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী গরুর গাড়ি। সেই সাথে হারিয়ে যাচ্ছে গাড়িয়াল পেশাও। যা একদা ছিল বংশ পরম্পরায়। সময় অতিবাহিত হবার সাথে সাথে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যের ধারক বাহক অনেক বাহনেরই আমূল পরিবর্তন,আধুনিকায়ন সাধিত হয়েছে।
আজ শহরের ছেলে-মেয়েরা তো দূরে থাক গ্রামের ছেলে-মেয়েরাও গরুর গাড়ির সাথে খুব একটা পরিচিত না। ইঞ্জিনের স্পর্শে আবহমান গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী অনেক বাহনই পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। আবার অনেক বাহনই হারিয়ে যাচ্ছে দৃশ্যপট থেকে। তেমনি দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি প্রকৃতিবান্ধব গরুর গাড়ি বহুবিধ কারণে বর্তমানে হারিয়ে গেছে। কয়েক বছর আগেও কালে-ভাদ্রে দু একটি গরুর গাড়ির দেখা মিললেও বর্তমানে তা ডুমুরের ফুল। একসময় উত্তরাঞ্চলের পল্লী এলাকার জনপ্রিয় বাহন ছিল গরুর গাড়ি। বিশেষ করে এই জনপদে কৃষি ফসল ও মানুষ বহনের জনপ্রিয় বাহন ছিল গরুর গাড়ি। যুগের পরিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে এই বাহন। মাঝে মধ্যে প্রত্যন্ত এলাকায় দু-একটি গরুর গাড়ি চোঁখে পড়লেও শহরাঞ্চলে একেবারেই দেখা যায় না।
গরুর গাড়ি হল দুই চাকাবিশিষ্ট গরু বা বলদে টানা একপ্রকার যান বিশেষ। এই যানে সাধারণত একটি মাত্র অক্ষের সাথে চাকা দুটি যুক্ত থাকে। সামনের দিকে একটি জোয়ালের সাথে দুটি গরু বা বলদ জুতে এই গাড়ি টানা হয়। সাধারণত চালক বসেন গাড়ির সামনের দিকে। তাঁর পিছনে বসেন যাত্রীরা। বিভিন্ন মালপত্র বহন করা হয় তারও পিছনের দিকে। বিভিন্ন কৃষিজাত দ্রব্য ও ফসল বহনের কাজে গরুর গাড়ির প্রচলন যথেষ্টই ব্যাপক। গ্রাম বাংলায় ঐতিহ্যগত ভাবে গরুর গাড়ি কিছুদিন আগে পর্যন্তও যাতায়াত ও মালবহনের কাজে প্রভূত পরিমানে ব্যবহৃত হত। দুই যুগ আগেও গরুর গাড়িতে চড়ে বর-বধূ যেত। গরুর গাড়ি ছাড়া বিয়ে কল্পনাও করা যেত না। বিয়ে বাড়ি বা মাল পরিবহনে গরুর গাড়ি ছিল একমাত্র পরিবহন বাহন। গরুর গাড়ির চালককে বলা হয় গাড়িয়াল। গ্রামের পথে গরুর গাড়ি,বউ চলেছে শ্বশুর বাড়ি। কথাটি কবিতার লাইন হলেও এক সময় তা বাস্তব ছিল। এখন এমন দৃশ্য এক কথায় দুর্লব ব্যাপার। কারণ গ্রাম-গঞ্জে গেলেও এখন এমন গরুর গাড়ির দেখা পাওয়া যায় না। এমন এক সময় ছিল যখন গ্রামের মানুষদের একমাত্র বাহন ছিল এই গরুর গাড়ি। সেটি খুব বেশি সময় আগের কথা নয়। ৩০/৩৫ বছর আগেও এইসব গরুর গাড়ির কদর ছিল খুব বেশি। কিন্তু এখন কালের গহবরে হারিয়ে যেতে বসেছে গরুর গাড়ি। হয়তো খুব খুঁজে দু একটি গরুর গাড়ি পাওয়া যাবে।
মানুষ এক সময় যা কল্পনা করেনি তাই এখন পাচ্ছে হাতের কাছেই ইট-পাথরের মত মানুষও হয়ে পড়ছে যান্ত্রিক। মানুষ তার নিজস্ব ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলছে। তারই ধারাবাহিকতায় এক সময়ের ব্যাপক জনপ্রিয় গ্রাম-বাংলা ও বাঙালির ঐতিহ্য এবং যোগাযোগ ও মালামাল বহনের প্রধান বাহন গরুর গাড়ি কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাবার পথে। এক সময় গ্রাম-বাংলায় কৃষকের ঘরে ঘরে শোভা পেত নানা ধরনের গরুর গাড়ি।এখন আর গ্রাম গঞ্জে আগের মতো গরুর গাড়ি চোখে পড়ে না।এ কারণে শহরের ছেলে-মেয়েরা দূরের কথা,বর্তমানে গ্রামের অনেক ছেলে-মেয়েরাও গরুর গাড়ির শব্দটির সাথে তেমন পরিচিত নয়।
তবে বর্তমানে নানা ধরনের মোটরযানের কারণে অপেক্ষাকৃত ধীর গতির এই যানটির ব্যবহার অনেক কমে এসেছে। তাই এখন আর তেমন চোখে পড়ে না। বর্তমান যুগ হচ্ছে আধুনিক ও যান্ত্রিক যুগ।তাই মানুষ আজ দ্রুত চলাচলের জন্য আধুনিক যন্ত্র চালিত যানের প্রতিই ঝুকে পড়েছে।আধুনিকতার ছুয়ায় যান্ত্রিক যন্ত্র আবিস্কার ও কৃষকদের মাঝে প্রযুক্তির ছোঁয়া লাগার কারণে গরুর গাড়ির স্থান দখল করে নিয়েছে ভ্যান,বাস,অটোরিকশা,নছিমন,করিমন,ভুটভুটি ইত্যাদি কৃষকসহ সকল শ্রেণীর মানুষ এখন যাতায়াত ও পণ্য পরিবহনের জন্য এ সকল যান্ত্রিক পরিবহণের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। মানুষের যাতায়াতের জন্য রয়েছে মোটরগাড়ি,রেলগাড়ি,
বেবিট্যাক্সি,অটোরিকশা,বাস,ট্রেন,প্লেনসহ ইত্যাদি যানবাহন।ফলে গ্রামাঞ্চলেও আর চোখে পড়ে না গরুর গাড়ি।অথচ গরুর গাড়ির একটি সুবিধা হলো,এতে কোনো জ্বালানি লাগে না। ফলে ধোঁয়া হয় না। পরিবেশের কোনো ক্ষতিও করে না। এটি পরিবেশবান্ধব একটি যানবাহন।
ঐতিহ্যবাহী এই গরুর গাড়ী গুলো আগামী প্রজন্ম হয়তো আর দেখতে পাবে না। এমন এক সময় আসবে যখন বাংলাদেশে আর কোন গরুর গাড়ি অবশিষ্ট থাকবে না। গরুর গাড়ি হবে শুধুই ইতিহাস। এক সময় মানুষ বিয়ে সাদি থেকে শুরু করে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এক স্থান থেকে অন্ন স্থানে যাতাযাত করতো গরুর গাড়ীর মাধ্যমে। যা এখন শুধু মাত্র গল্পের মতো মনে হয়।
পহেলা বৈশাখ সহ সকল অনুষ্ঠানে পরিবার পরিজন নিয়ে এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে মেলা দেখতে যাওয়া গরুর গাড়ীতে বসে গাড়ী ওয়ালার ভাটিয়ালী গান শোনা সে যেন এক অন্য রকম অনুভূতি। কিন্ত বর্তমানে গ্রাম বাংলা থেকে গরুর গাড়ী হারিয়ে যাওয়ায় এসব অনুভূতি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বর্তমান যুগের ছেলে/মেয়েরা। গরুর গাড়ি ঐতিহ্যেরই একটা অংশ। গ্রামীণ পরিবেশে গরুর গাড়ির প্রচলন থাকলেও বর্তমানে তেমন একটা চোখে পড়ে না। ইতিহাস-ঐতিহ্যের অনেক কিছ্ই আমরা ক্রমান্বয়ে হারাচ্ছি আধুনিকতার ছুয়াঁয়।
১।গরুর গাড়ির ইতিহাসঃ
গরুর গাড়ির ইতিহাস সুপ্রাচীন। নব্যপ্রস্তর যুগের সময় থেকেই মানুষ এই যানটি ব্যবহার করে আসছে। ফ্রান্সের ফঁতান অঞ্চলে আল্পস পর্বতের উপত্যকায় একটি গুহায় গরুর গাড়ির যে ছবি পাওয়া যায়,তার থেকে জানতে পারা যায় খ্রিস্টের জন্মের ৩১০০ বছর আগে ব্রোঞ্জ যুগেও গরুর গাড়ির অস্তিত্ব ছিল।
হরপ্পা সভ্যতাতেও যে গরুর গাড়ির অস্তিত্ব ছিল তার সপক্ষে প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ পাওয়া যায়। সেখানেও নানা অঞ্চল থেকে এক অক্ষের বিশিষ্ট চাকাওলা নানা খেলনা পাওয়া গেছে। এগুলি থেকে বিশেষজ্ঞদের অনুমান,খ্রিস্টজন্মের ১৬০০ থেকে ১৫০০ বছর আগেই সিন্ধু অববাহিকা ও ভারতীয় উপমহাদেশের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে গরুর গাড়ির প্রচলন ছিল, যা সেখান থেকে ক্রমে ক্রমে দক্ষিণেও ছড়িয়ে পড়ে। তবে গ্রাম বাংলার এই ঐতিহ্য আজ প্রায় বিলুপ্তির পথে।
২।গরুর গাড়ির চাকাঃ
গরুর গাড়িতে গরু জুততে সাধারণত জোয়াল ব্যবহার করা হয়,ঘোড়ার গাড়ির মতো লাগাম ব্যবহার করা হয় না। গাড়ির চাকাগুলি হয় বড় বড়,সাধারণত কাঠের তৈরি। তবে এখন তাতে প্রায়শই লোহার রিম ব্যবহার করা হয়। সম্পূর্ণ লোহার তৈরি চাকার ব্যবহারও খুব বিরল নয়। যাত্রীদের রোদ ও বৃষ্টির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য গাড়ির উপর অনেক সময়েই ছই এর প্রচলনও আছে। গাড়ির পাটাতনটি সাধারণত বাঁশ বা কাঠ দিয়ে তৈরি করা হয়। ছইটি হয় সাধারণত বেতের বোনা। কখনও কখনও তা বাঁশ ও খড় দিয়েও তৈরি করা হয়ে থাকে।
৩। ব্যবহারঃ
সভ্যতার প্রায় উন্মেষকাল থেকেই গরুর গাড়ি এশিয়া,ইউরোপ ও আফ্রিকার প্রায় সর্বত্রই ছিল যাতায়াত ও পরিবহনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ যান। কিন্তু পশ্চিম ইউরোপে পরে দ্রুতগামী ঘোড়ায় টানা গাড়ির ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় পরিবহন ও যাতায়াতের মাধ্যম হিসেবে গরুর গাড়ির ব্যবহার কমে আসে। পরবর্তীকালে যন্ত্রচালিত লাঙল বা পাওয়ার টিলার এবং নানাবিধ যন্ত্রযানের উদ্ভবের ফলে এখন ঐ অঞ্চলে গরুর গাড়ির ঐতিহ্য কেবলমাত্র টিকে রয়েছে নানারকম লোকসংস্কৃতি ও তাকে ভিত্তি করে নানা মেলার-অনুষ্ঠানে। আবার আফ্রিকার বহু জায়গায় প্রবল জঙ্গলাকীর্ণ ভূমিরূপের কারণে সেখানে পথঘাট যেকোনও রকম গাড়ি চালনারই অনুপযুক্ত ছিল। তাই এইসব জায়গার মানুষদের মধ্যে গরুর গাড়ি সংক্রান্ত কোনও ধারণার প্রচলনই ছিল না। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকায় যখন ওলন্দাজ ঔপনিবেশিকরা প্রবেশ করতে থাকে,বহুক্ষেত্রেই তারা বাহন হিসেবে গরুর গাড়িকে ব্যবহার করে। ঊনবিংশ শতাব্দীর বিভিন্ন জনপ্রিয় উপন্যাসেও তাই আমরা দক্ষিণ আফ্রিকায় যাতায়াত ও মালবহনের উপায় হিসেবে গরুর গাড়ির উল্লেখ দেখতে পাই। উদাহরণস্বরূপ আমরা এক্ষেত্রে এইচ.রাইডার হ্যাগার্ড এর বিখ্যাত উপন্যাস কিং সলোমনস মাইনস এর উল্লেখ করতে পারি। এক্ষেত্রে তারা গরুর গাড়ির আরেকটি ব্যবহার জনপ্রিয় করে তোলে। রাত্রিতে বিশ্রাম নেওয়ার সময় বা বিপদে পড়লে তারা প্রায়শই গরুর গাড়ি গুলোকে গোল করে সাজিয়ে একধরণের দুর্গ গড়ে তুলে তার মধ্যে আশ্রয় নিত। গরুর বা ঘোড়ার গাড়িকে ব্যবহার করে এইধরণের দুর্গ গড়ে তোলার রেওয়াজ অবশ্য আমরা এর অনেক আগে থেকেই দেখতে পাই। চেঙ্গিজ খানের নাতি বাতু খানের নেতৃত্বে ত্রয়োদশ শতাব্দীতে রাশিয়া ও পূর্ব ইউরোপে যে মোঙ্গল আক্রমণ চলে সেখানে তার প্রতিরোধে স্থানীয় অধিবাসীদের দ্বারা গরুর গাড়ির এই ধরণের ব্যবহারের কথা আমরা জানতে পারি। বিশেষ করে কালকার যুদ্ধে কিয়েভ রুশেরা এই ধরণের গাড়ি নির্মিত চলমান দুর্গ তৈরি করে মঙ্গোল আক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। পূর্ব ইউরোপ ও এশিয়ার বহু অংশে এখনও গ্রামীণ অঞ্চলে মূলত মাল পরিবহনের কাজে গরুর গাড়ির ব্যবহার এখনও প্রচলিত আছে।
৩।বাংলা সিনেমায় ব্যবহৃত ঐতিহ্যবাহী গরুর গাড়ির সেই গানঃ
আমার গরুর গাড়িতে বউ সাজিয়ে
ধুত্তুর ধুত্তুর ধুত্তুর ধু সানাই বাজিয়ে।
যাবো তোমায় শ্বশুর বাড়ি নিয়ে
(যা যা…)
তোমার ভাঙা গাড়িতে আমি যাবো না
কারো ঘরের ঘরণী আমি হবো না
করবো না তো কোনো দিনও বিয়ে
এ হে,যাবো তোমায় শ্বশুর বাড়ি নিয়ে
আলতা দেবো তিকলি দেবো,দেবো সোনার চুড়ি
(না না না না না না…)
আরে,শহর থেকে আনবো কিনে বেনারসী শাড়ি
(আরে, না না না না না…)
গয়না-গাটি চাইনা আমি চাইনা শাড়ি চুড়ি
(হেই হেই হেই হেই হেই হেই…)
সবই আমার বাপের বাড়ি আছে ভুরিভুরি
(আরে,হেই হেই হেই হেই হেই হেই…)
ভরবেনা মন কোনো কিছু দিয়ে
হে,যাবো তোমায় শ্বশুর বাড়ি নিয়ে
আদর দেবো সোহাগ দেবো,দেবো ভালোবাসা
(না না না না না না…)
আরে,জীবন দিয়ে করবো পূরণ তোমার সকল আশা
(না না না না না না…)
ইন্দ্রপুরে মনের ঘরে দিও নাকো হানা
(হেই হেই হেই হেই হেই হেই…)
এই সব কথা শোনা পাপ গুরুজনের মানা
(আরে,হেই হেই হেই হেই হেই হেই…)
এই,পায়ে ধরি চল বাড়ি নিয়ে
যাবো তোমায় শ্বশুর বাড়ি নিয়ে।।
কালের পরিক্রমায় আধুনিকতার স্পর্শে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী গরুর গাড়ির পাশাপাশি এখন আর গরুর গাড়ি নিয়ে জনপ্রিয় গান,কবিতা তেমন একটা লিখতে দেখা যায়না। কালের গহবরে হারিয়ে যেতে বসেছে গরুর গাড়ি।ঐতিহ্যবাহী এই গরুর গাড়ী গুলো আগামীতে গ্রামবাংলার ঐতিহ্য ও ইতিহাস রুপে হয়তো স্থান করে নিবে কোন জাদু ঘরে।
আমাদের আগামী প্রজন্মরা ঐতিহ্যবাহী এই গরুর গাড়ী গুলো হয়তো কোন উপন্যাসে পড়ে সজানতে পারবে আর না হয় জাদু ঘরে দেখতে পাবে।
সম্পাদকঃ মো শফিকুল ইসলাম, নির্বাহী সম্পাদক: কাজী মোস্তফা রুমি, বার্তা সম্পাদকঃ ফারহানা বি হেনা।
বাংলাদেশের বহুল প্রচারিত ও জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল।
Copyright © 2025 Channel One BD. All rights reserved.