শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:২৬ অপরাহ্ন
ব্রেকিং নিউজঃ
প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদে নাগরপুর উপজেলা বিএনপি’র সাংবাদিক সম্মেলন ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা পেল সেনাবাহিনী নাগরপুরে শহীদ ক্যাডেট স্কুলে কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা ও অভিভাবক সমাবেশ অনুষ্ঠিত ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, নাগরপুর উপজেলা শাখার উদ্যোগে গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত জয়তুন ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের উদ্যোগে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ “জনতার সময়” অনলাইন নিউজ পোর্টালের সম্পাদক হলেন কাজী মোস্তফা রুমি ডুমুরিয়ায় ক্লাইমেট স্মার্ট প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃষক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত নোয়াখালীতে সি‌লেট-চট্টগ্রাম ফ্রেন্ড‌শীপ ফাউ‌ন্ডেশনের মে‌ডি‌কেল ক্যাম্প অনু‌ষ্ঠিত জাতিসংঘের অধিবেশনে প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী ৭ জন আইওআই(IOI) তে বাংলাদেশের প্রথম স্বর্ণ পদক লাভ করেছেন সিলেটের দেবজ্যোতি দাস সৌম্য

খুলনার শিপইয়ার্ড সড়ক: ১০ বছর ভোগাচ্ছে চার কিলোমিটার রাস্তা

খুলনার শিপইয়ার্ড সড়ক: ১০ বছর ভোগাচ্ছে চার কিলোমিটার রাস্তা

মোঃ খাইরুজ্জামান সজিব
সিনিয়র চীফ রিপোর্টার

খুলনার শিপইয়ার্ড সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়া হয় এক দশক আগে। রাস্তাটির চার লেনে প্রশস্তকরণের কাজ শুরু হতেই লেগে যায় প্রায় ৯ বছর। কাজের ধীরগতি নিয়ে আছে বিভিন্ন পক্ষের অভিযোগ। দেড় বছরে চার কিলোমিটার এই সড়কের কাজ এগিয়েছে ৩৮ শতাংশ। বাকিটুকু শেষ করার জন্য সময় আছে ১২ মাসের মতো। এই মেয়াদে প্রকল্পটি শেষ হবে কিনা তা নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন। কিন্তু ভোগান্তি কমেনি একটুও। উল্টো প্রায় এক যুগ ধরে বেড়েই চলেছে খানাখন্দে ভরা এ পথে চলাচলকারী মানুষ এবং যানবাহনের দুর্ভোগ। দুর্ঘটনা যেন নিত্যসঙ্গী। নগরীর রূপসা ট্রাফিক মোড় থেকে রূপসা সেতু পর্যন্ত ভাঙাচোরা সড়কে চলাচলে কষ্টের সীমা নেই। গোটা সড়কেই সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্ত। সামান্য বৃষ্টি হলেই জমে যায় পানি। জলাবদ্ধতা থাকা অবস্থায় যান চলাচল অসম্ভব হয়ে পড়ে। ভয়ে ভয়ে অনেকে গাড়ি চালাতে গিয়ে শিকার হয়েছেন দুর্ঘটনার। কাদা-পানির কারণে হাঁটাও দায়। মাঝেমধ্যে গর্তে পড়েন পথচারী, উল্টে যায় ইজিবাইক, ভ্যানসহ বিভিন্ন যানবাহন। এ অবস্থা চলছে বছরের পর বছর ধরে, লাখো মানুষের চলাচলকারী রাস্তাটিতে দুর্ভোগের চিত্র যেন দেখার কেউ নেই।
খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ) জানায়, শিপইয়ার্ড সড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন প্রকল্প একনেকে অনুমোদন পায় ২০১৩ সালের ৭ মে। তখন ব্যয় ধরা হয়েছিল ৯৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা। কিন্তু জমি অধিগ্রহণসহ নানা জটিলতায় পরবর্তী সাত বছরেও কাজ শুরু হয়নি। এর পর প্রকল্প সংশোধন করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। ২০২০ সালের ২১ জুলাই ‘খুলনা শিপইয়ার্ড সড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন (প্রথম সংশোধিত)’ প্রকল্প আবার একনেকে অনুমোদন হয়। তখন প্রকল্প ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ২৫৯ কোটি ২১ লাখ টাকায়। অনুমোদনের পর দরপত্র আহ্বান করে ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দিতে পেরিয়ে যায় আরও দেড় বছর। ২০২২ সালের ১২ জানুয়ারি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘আতাউর রহমান লিমিটেড অ্যান্ড মাহাবুব ব্রাদার্স প্রাইভেট লিমিটেডকে (জয়েন্ট ভেঞ্চার) কার্যাদেশ দেয় কেডিএ। ২০ জানুয়ারি কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। চুক্তি অনুযায়ী ২০২৪ সালের জুন মাসের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা। কিন্তু দেড় বছরে কাজ সম্পন্ন হয়েছে মাত্র ৩৮ শতাংশ।
কেডিএ জানায়, তিন দশমিক ৭৭৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সড়কটি চার লেন হবে। দু’পাশে নতুন ড্রেন ও ড্রেনের ওপর পথচারীদের হাঁটার জন্য প্রশস্ত ফুটপাত, সড়কের মাঝখানে শূন্য দশমিক ৯২ মিটার ডিভাইডার নির্মাণ করা হবে। মূল রাস্তা, ডিভাইডার, ড্রেন ও ফুটপাত মিলিয়ে সড়কটি ৬০ ফুট চওড়া হবে। নির্মাণ করা হবে ৪৮ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি সেতু, একটি স্লুইসগেট ও একটি কালভার্ট। এ ছাড়া রাস্তাটি আগের চেয়ে প্রায় তিন ফুট উঁচু হবে। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, সড়কের দুই পাশের অনেক স্থানে এখনও ড্রেন নির্মাণ সম্পন্ন হয়নি। রাস্তা সংস্কার ও ড্রেন নির্মাণের কাজ চলছে। রাস্তায় বৃষ্টিতে সৃষ্টি হওয়া বড় বড় গর্তে ইট ও বালু দিয়ে ভরাট করার চেষ্টা চলছে। বেশ কিছু স্থানে খোয়া ও বালু দিয়ে বেড তৈরি করা হয়েছে। নির্মাণ হয়নি সেতু, স্লুইসগেট ও কালভার্ট। তবে পাইলিংয়ের কাজ হয়েছে। হয়নি ফুটপাত ও ডিভাইডার। কাদা-মাটি আর গর্তে যানবাহন ও মানুষের চলাচলে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। ইজিবাইক চালক মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, রূপসা ট্রাফিক মোড় থেকে রূপসা সেতু পর্যন্ত সড়কটির অধিকাংশই ভাঙাচোরা। অনেক স্থানে বড় বড় খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই গর্তগুলো পানিতে ভরে যায়। আর ভারী বৃষ্টি হলে সড়ক তলিয়ে যায়। চলাচল করতে খুবই সমস্যা হয়। আরেক ইজিবাইক চালক লুৎফর রহমান বলেন, গর্তে পড়ে মাঝেমধ্যে গাড়ি বন্ধ হয়ে যায়, যাত্রী নিয়ে উল্টে পড়ি। কবে এই দুর্ভোগের শেষ হবে জানা নেই। সড়কটিতে গর্ত থাকার কারণে চলাচলে সময় লাগছে বেশি। সে কারণে ১০ টাকার ভাড়া ১৫ টাকা এবং ৫ টাকার ভাড়া ১০ টাকা নিতে হচ্ছে। প্রকল্প পরিচালক আরমান হোসেন জানান, প্রথম দিকে জমি অধিগ্রহণ জটিলতায় প্রকল্পের কাজ বাধাগ্রস্ত হয়। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে কাজ শুরুর ১০ মাস পর জমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। এই প্রকল্পে ৭ দশমিক ৩ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। বর্তমানে পুরোদমে কাজ চলছে। সড়কের সাব-বেজ ২৫ শতাংশ ও ড্রেনের কাজ ৬০ শতাংশ শেষ হয়েছে। সেতু ও কালভার্টের পাইলিংয়ের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করার চেষ্টা চলছে। খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব বাবুল হাওলাদার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, একটি সড়ক চার লেনে উন্নীত করতে ১০ বছরেরও বেশি সময় লাগবে, এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। দেড় বছরে মাত্র ৩৮ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ আছে এক বছর, এই সময়ে কি আদৌ বাকি ৬২ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হবে? রাস্তাটির একটি অংশ চলাচলের উপযোগী করে অপর অংশের কাজ করলে মানুষের দুর্ভোগ পোহাতে হতো না।



Our Like Page