অপু দাস, সহ-বার্তা সম্পাদকঃ
রাজধানীর ঢাকা বঙ্গবাজার প্রথমে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত থেকে সারা দেশে একের পর এক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নাশকতাকে সামনে রেখে অনুসন্ধান শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পুলিশের ধারণা, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাগুলো সাধারণভাবে সাদা চোখে দুর্ঘটনা মনে হলেও একই সময় এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লাগায় এবং ফায়ার সার্ভিসের উপর আক্রমণ এই সন্দেহ জোরালো হয়েছে। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা অস্থিতিশীল করতে তৃতীয় কোনো পক্ষ এই নাশকতা করছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সম্প্রতি বঙ্গবাজারের চারটি মার্কেট ভয়াবহ আগুনে পুড়ে যাওয়ার পর এই অগ্নিকাণ্ড দুর্ঘটনা না কি নাশকতা, তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। বঙ্গবাজারের আগুনের রেশ কাটতে না কাটতেই আগুনে পুড়ে ছারখার হয়ে যায় নিউ সুপার মার্কেট। এরপর আগুন লাগে উত্তরার বিজিবি মার্কেটে। গেল সোমবার মধ্য রাতে আগুন লাগে ওয়ারীর একটি মার্কেটে। শুধু রাজধানী ঢাকাতেই নয়, ঢাকার বাইরেও গত কয়েক দিনে অন্তত দুই ডজন অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।
গেল শনিবার গণভবনে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোয়ান বোর্ডের এক অনুষ্ঠানে একের পর এক অগ্নিকাণ্ডের নেপথ্যে ষড়যন্ত্র বা নাশকতা আছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, যখন প্রথম অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে, তখন ধারণা করা হয়েছিল যে এটি একটি দুর্ঘটনা হবে। কিন্তু প্রথমটির একই সময়ে আরও কয়েকটি ঘটনার পর দেখা গেছে প্রায় একই সময়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাগুলো ঘটেছে। এ জন্য নজরদারি বাড়ানোসহ মার্কেটসংশ্লিষ্টদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও সম্প্রতি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাগুলো নাশকতা কি না, তা খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন। ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালকও একই কথা বলেছেন। এই অবস্থায় গেল মঙ্গলবার শতাধিক ব্যবসায়ী প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার খন্দকাল গোলাম ফারুক। এক দিন আগে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের জাতীয় নিরাপত্তা-সংক্রান্ত সেলের বৈঠকেও ধারাবাহিক অগ্নিকাণ্ডে নাশকতার যোগসূত্র নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গেল ১২ এপ্রিল রাত ৯টা ৫৪ মিনিটে টঙ্গীর সবুরা মার্কেটে আগুন লাগে। তবে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হওয়ার আগেই ব্যবসায়ীরা আগুন নিভিয়ে ফেলেন। তবে আগুনের স্থল থেকে একটি বোতলে পেট্রল, একটি বাটন মোবাইল এবং মোবাইলের সঙ্গে তারসহ কিছু সরাঞ্জামাদিও উদ্ধার করা হয়। পরে মার্কেটের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, অজ্ঞাত এক যুবক আগুন লাগার আগ মুহূর্তে একটি ব্যাগ কাঁধে নিয়ে সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরা করছে।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের উপ-কমিশনার মোহাম্মদ ইব্রাহীম খান জানান, তারা সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে অজ্ঞাত ওই যুবককে শনাক্ত করার চেষ্টা করছেন।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ডিএমপি কমিশনারের বৈঠকে ডিবি প্রধান হারুন অর রশিদ বলেন, ‘একটার পর একটা আগুন লাগার ঘটনায় নাশকতার যোগসূত্র নিয়ে সন্দেহ করা হচ্ছে। আমরা আমাদের নজরদারি বাড়িয়ে দিয়েছি । কেউ যদি নাশকতা করার চেষ্টা করে থাকে তবে তাদের উদ্দেশ্য আমরা সফল হতে দেব না। নাশকতা কেউ করে থাকলে যেকোনো মূল্যে তাদের খুঁজে বের করা হবে।‘
গোয়েন্দাসংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জানান, সাম্প্রতিক সময়ে আগুন লাগার সময় ও স্থানগুলোতে মিল রয়েছে। বেশির ভাগ আগুনই লাগছে মধ্যরাত থেকে সাহরির সময়ে। এ ছাড়া মার্কেটগুলোতে আগুন লাগছে। ঈদের আগ মুহূর্তে ব্যবসায়ীদের নিঃস্ব করে দিয়ে অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা তৈরির জন্য কোনো পক্ষ এই কাজ করতে পারে। এ জন্য রাতভর মার্কেটগুলোতে নিজস্ব নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ করার কথা বলা হয়েছে। একই সঙ্গে গোয়েন্দা পুলিশও সাদা পোশাকে বিশেষ মার্কেট বা স্থাপনাগুলো নজরদারির মধ্যে রেখেছে।
ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেছেন, ‘রোজার মধ্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই ছিল। কিন্তু সম্প্রতি কয়েকটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আমাদের ভাবিয়ে তুলেছে। এসব ঘটনা নাশকতা কি না, তা আমরা তদন্ত করে দেখছি। এগুলো যেন আর না ঘটে, এ জন্য আমরা নজরদারি বাড়িয়েছি। কিন্তু মার্কেট কর্তৃপক্ষকেও নিজ নিজ মার্কেট যাতে আগুনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।’
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতিরি সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘আমরা মার্কেটগুলোতে পালাবদল করে রাতভর পাহারা দেয়ার ব্যবস্থা করছি। আগামী কয়েক দিন নিয়মিত পাহারা দেয়া হবে। যাতে কোনো কারণেই আগুন না লাগে।