মোছা: রুমানা আক্তার রুনি
পশ্চিম আকাশে সূর্যটা হেলে পড়তেই জবি ক্যাম্পাসে শুরু হয় নতুন এক ব্যস্ততা। তবে এই ব্যস্ততা কোনো শিক্ষা কেন্দ্রিক ব্যস্ততা নয়। এই ব্যস্ততা হচ্ছে ভ্রাতৃত্ব, বন্ধুত্ব, সম্পর্কের মেলবন্ধন, আতিথিয়েতা, হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে এক হয়ে যাওয়ার অন্যতম অনুষঙ্গ ইফতারের ব্যস্ততা।
বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার আগে প্রায় অধিকাংশ শিক্ষার্থীর রমজানে পরিবারের সাথে ইফতারের অভিজ্ঞতা ছিলো ভিন্নরকমের। তখন সবার মা ইফতার বানাতেন, পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাথে সবাই ইফতার করতো। কিন্তু এখন তারা নতুন এক অভিজ্ঞতা অর্জন করছে। ক্যাম্পাসে বন্ধু- বান্ধব, বড়ভাই- আপু, শিক্ষক - শিক্ষিকাসহ অন্যান্য কর্মচারীদের সাথে ইফতার করার অনুভূতিটায় পুরোপুরি আলাদা। ইফতার করার বিষয়টা শুধু খাওয়ায় সীমাবদ্ধ থাকেনা, যাদের সাথে ইফতার করা হয় তাদের সাথে সম্পর্কও গভীর হয়। ক্যাম্পাসে এভাবে বন্ধু, বড়ভাইদের সাথে ইফতার করলে পরিবার থেকে দূরে থাকার কষ্ট টা আংশিক হলেও কমে যায়, কিছুটা হালকা হয়।
রোজা শুধু মুসলিম উম্মা'র জন্য হলেও ক্যাম্পাসের ইফতারে ধর্ম- বর্ণ, জাত- গোত্র সব ভেদাভেদ ভুলে সবকিছুর উর্ধ্বে গিয়ে সব শ্রেণীর মানুষ মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। রমজান যেমন শেখায় সহমর্মিতা, সংযম, আত্নশুদ্ধি তেমনি একইসঙ্গে ইফতারের মাধ্যমে ফুটে উঠে ভ্রাতৃত্ব, সৌহার্দ্য' র দৃষ্টান্ত। তাই নিজেদের মধ্যকার সকল প্রকার ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে একে অপরের সাথে ইফতার ভাগ করে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন অটুট রাখতে রমজানের গূরুত্ব ও বৈশিষ্ট্য অপরিসীম।
বছরের অন্য সময় সন্ধ্যায় আমাদের এই সাড়ে সাত একরের ছোট্ট ক্যাম্পাস গান- বাজনা, নাচ, আড্ডা, পিকনিক, খেলাসহ আরও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মত্তো থাকলেও রমজানে ইফতার সামগ্রী নিয়ে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ ভবন, ক্যাফেটেরিয়া, কাঁঠালতলা, শহীদমিনার, শান্তচত্বর, বিজ্ঞানভবনসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় খোপে খোপে দলবেঁধে বসে অপেক্ষা করতে থাকে মাগরিবের আজানের। রমজানের প্রতিদিন ই সন্ধ্যায় আমাদের ছোট্ট এই ক্যাম্পাসের প্রায় সমগ্র অংশ জুড়েই দেখা মিলে এমন চিত্রের।
কেউ বা ছোলা- মুড়ি, চপ, ঘুগনি জিলাপি মাখায়, কেউ বা ফল কাটে, কেউ কেউ শরবত বানায়, কেউ বা খাবারের প্লেট সাজায়, আবার কেউ খাবার পানির গ্লাস সাজায়। ক্যাম্পাসে এমন ই আয়োজন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে শিক্ষার্থীরা। এভাবেই ক্যাম্পাসে সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে বিভিন্ন ফ্যাকাল্টির শিক্ষার্থীদের ইফতারের আয়োজন। যার মাধ্যমে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গুলো আরও গাঢ় হয়, বৃদ্ধি পায় তাদের সম্পর্কের দৃঢ়তা। এভাবেই দেশের আনাচে কানাচে থেকে আসা শিক্ষার্থীরা তাদের পরিবার কেন্দ্রিক কষ্ট গুলো সাময়িকের জন্য হলেও ভুলে গিয়ে ডুবে যায় তাদের দ্বিতীয় পরিবার থেকে পাওয়া ভিন্নরকম এক ভালোবাসায়।
ইফতারের এসব সৌন্দ্যর্যের বাইরেও আবার কিছুকিছু ক্ষেত্রে লুকিয়ে থাকে অনেক বেদনার গল্পও। আর এই বেদনা টা বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ সেমিস্টারের শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে আরও বেশি। ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী হিসেবে এবারই তাদের শেষ ইফতার। এভাবে হয়তো তাদের আর ইফতার করা হয়ে উঠবেনা। তাদের জন্য হয়তো সময়টা খুব দ্রুতই বিদায় নিচ্ছে। তাদের স্মৃতিপটে হয়তো ভেসে উঠছে বন্ধুদের সাথে কাটানো এতদিনের মধুর সময়গুলো।
সত্যিই সৌন্দর্যের আড়ালে লুকিয়ে থাকে অনেক বেদনা। তাই সবকিছু মিলিয়ে এটায় বলবো, থমকে যাওয়া কিছু মুহূর্ত আর শব্দ দিয়েই জীবন সুন্দর। ক্যাম্পাসে প্রতিবছর ইফতারের যে সৌন্দর্য তৈরী হয়ে থাকে বা পরবর্তী বছর গুলোতে হবে তার বেদনার গল্পগুলোও মধুর ও স্মৃতিময় হয়ে বেঁচে থাকুক নিস্তব্ধ জীবনের উচ্ছ্বাসিত অধ্যায়ে।
মোছা: রুমানা আক্তার রুনি
শিক্ষার্থী, রসায়ন বিভাগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।
সম্পাদকঃ মো শফিকুল ইসলাম, নির্বাহী সম্পাদক: কাজী মোস্তফা রুমি, বার্তা সম্পাদকঃ ফারহানা বি হেনা।
বাংলাদেশের বহুল প্রচারিত ও জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল।
Copyright © 2025 Channel One BD. All rights reserved.