স্টাফ রিপোর্ট:
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল-আলম হানিফ এমপি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সিলেটের বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন ও বন্যার্থদের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণের পর সিলেট সার্কিট হাউজে সাংবাদিকদের সাথে বন্যা ও সার্বিক বিষয় নিয়ে মুক্ত আলোচনা ও প্রশ্ন উত্তরে যোগদান করেন।
এ সময়ে তিনি বলেন, যখন দেশে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দেয় তখন সরকারের প্রথম কাজ থাকে মানুষকে প্রাণে বাঁচানোর। তারপর সরকার কার কী ক্ষতি হলো সেটি খুঁজে বের করা। এবারেও সরকার সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন- বন্যা পরবর্তী সময়ে ইউনিয়নভিত্তিক মানুষের ঘরবাড়ি, ক্ষেত-খামার ইত্যাদির ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করতে। সরকার তার সাধ্য অনুযায়ী পুনর্বাসনসহ মানুষের ক্ষয়ক্ষতি পূরণ করার চেষ্টা করবে।সিলেট সার্কিট হাউসে বন্যার পরিস্থিতি নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আকস্মিক বন্যা হওয়ার কারণে প্রথম দিকে ত্রান বিতরণে এলোমেলো পরিস্থিতিতির সৃষ্টি হয় কারণ এবারের ভয়াবহ বন্যায় সকল প্রবাসী ও বিভিন্ন সংস্থা,বিভিন্ন দাতাগোষ্ঠী, বিভিন্ন সংগঠন গুলো সারা বাংলাদেশ থেকে ত্রাণ নিয়ে সিলেটে ছুটে এসেছেন বন্যায় কবলিত মানুষের জন্য এবং যে যেভাবে পারেন বন্যার্থ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন সবার একটাই লক্ষ ছিল আগে মানুষ গুলো কে বাঁচানো কারণ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা সংস্থা গুলো ঠিক বুঝে উঠতে পারেনি তাত্ক্ষণিকভাবে কি করতে হবে কার সহায়তা নিতে হবে বা কোন কোন এরিয়া গুলোতে যেতে হবে যাতে করে সমন্বয়হীনতার সৃষ্টি হয়। কিন্তু এখন পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতির দিকে তাই সকল দাতাগোষ্ঠী, অঙ্গ সংগঠন গুলোকে সমন্বয় করেই ত্রাণ বিতরণ করা হবে। কারণ এখানো অনেক এরিয়ায় মানুষ সঠিকভাবে ত্রাণ পায়নি বা অনেক এরিয়াতে পানির অতিরিক্ত স্রোতের কারনে পৌছানো সম্ভব হয়নি এখন আমারা সেই সব এরিয়া গুলো কে নির্বাচন করে তাদেরকে ত্রান সামগ্রী বিতরণ করার চেষ্টা করবো।
তিনি আরও বলেন, আমাদের ত্রাণ কিন্তু অপর্যাপ্ত যে তা কিন্তু নয় বরং আমাদের কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ত্রাণ সামগ্রী আছে তবে আমরা এখন থেকে সমন্বয়ের মাধ্যমেই ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করবো। তবে একটি কথা না বললেই নয়, এই আকস্মিক বন্যায় বাংলাদেশের সকল প্রান্তের মানুষ সিলেটের বন্যায় কবলিত মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে এক নজির বিহীন ইতিহাস তৈরি করেছেন যা এর আগে কখনোই হয়নি বা কেউ তা দেখেনি। আমি এই দূর্যোগ পূর্ণ সময়ে বাংলাদেশের সকল প্রান্তের সকল মহতী মানুষ গুলো কে ধন্যবাদ জানাই আমাদের বাংলাদেশের এই ভাত্রিত্তপূর্ণ সু-সম্পর্ক সব সময় বজায় থাকুক।
এসময় তিনি আরও বলেন, বৃহত্তর সিলেট এবার স্নরনকালের ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে। আগামীতে যে এমন বন্যা আসবে না তা বলা যায় না। তাই এ বিষয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়, পরিবেশ অধিদপ্তর, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় স্থায়ী সমাধানের উদ্যোগ ও ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেন। আমাদের নদীমাতৃক দেশে ৫৪টি নদীর অববাহিকা রয়েছে। আর আমরা সবগুলো নদীর ভাটিতে। তাই বেশিরভাগ নদী দিয়ে উজানে থাকা ভারত ও চীন থেকে পানি নেমে আসে। আর পানি যখন আসে তখন প্রচুর পলি আসার কারণে নদীগুলো ভরাট হয়ে যায়। তাই এই ৫৪টি নদীকে ড্রেজিং করে গভীর করা খুবই চ্যালেঞ্জিং বিষয়। তারপরও আমাদের বর্তমান সরকার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে এ উদ্যোগ নিয়েছে। গত ১০ বছরে ৫ শতাধিক ড্রেজার মেশিন কেনা হয়েছে। নদী খননের কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে, এদিকেও খুব তাড়াতাড়ি ড্রেজিং কাজ শুরু হবে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, সিলেট অতি বৃষ্টির অচঞ্চল তাই অতি বৃষ্টি ও ভারতের নদীগুলো থেকে হঠাৎ করে ঢল নেমে এই অঞ্চলে বন্যার সৃষ্টি হয় যেহেতু এই এলাকাটি ভারতের খুবই কাছাকাছি। তাই এ ব্যাপারে পানি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে স্থায়ী সমাধানের পথ বের করতে হবে আমাদের কে। আমি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দপ্তরকে এ বিষয়ে অবহিত করবো।
মাহাবুব-উল-আলম হানিফ এমপি আরও বলেন, আমাদের দেশে সরকার বা সাংবাদকি কিছু একটা বললেই নেতিবাচক মন্তব্য চলে আসে। নেতিবাচক বক্তব্য দেশের জন্য কখনোই ভালো নয়। আমাদেরকে ইতিবাচক কথা বলতে হবে। সবাই ইতিবাচক হলে সীমিত সম্পদ নিয়েই আমাদের দেশ অনেকদূর এগিয়ে যাবে।
তিনি আরও বলেন, একসময় বাংলাদেশকে নিয়ে অনেক নেতিবাচক কথা হতো। সেই বাংলাদেশ এখন ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এর কারণ একমাত্র আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদৃঢ় লিডারশিপ। প্রধানমন্ত্রীর দক্ষতা ও যোগ্য নেতৃত্বের জন্যই আজ বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে একটি মর্যাদার জায়গায় দাড়িয়েছে। তাঁর জন্যই পদ্মা সেতুর মতো একটি বিস্ময় বাংলাদেশ উপহার দিতে পেরেছে। এটি শুধু একটি সেতুই নয়, এটি আমাদের সক্ষমতার প্রতীক।আমাদের সকলের গর্বের প্রতিক। পদ্মা সেতু হওয়ার কারণে বিশ্বের অন্যান্য দেশ গুলোও বাংলাদেশের সাথে র্বিযনিয়োগে বেশ আগ্রহী।
ব্যাংক ও বিভিন্ন সংস্থা থেকে কৃষক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ঋন নেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন,আকস্মিক বন্যায় ক্ষতি গ্রস্ত সকল কৃষক,বিভিন্ন খামারিদের ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের যারা ঋন নিয়েছেন তাদের যাতে করে ঋণের সুদের টাকা মৌকুফ করা যায় ও ঋণের টাকার জন্য যাতে তাদের কে চাপ না দেয়া হয় সেই বিষয়ে আমরা বিশেষ নজর রাখবো যাতে করে বন্যায় ক্ষতি গ্রস্ত কৃষক,বিভিন্ন খামারী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা অন্তত ছয় মাস সময় পান যাতে করে বন্যা পরর্বতি সময়ে ঋন নেয়া সকল ঋন গ্রহিতারা এই ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারেন ও কিছুটা হলেও পূর্বের স্থানে পৌঁছাতে পারেন সেই দিকে আমরা খেয়াল রাখবো। আমাদের সরকার সব সময় সাধারণ জনগণের সুযোগ সুবিধা গুলো কে গুরুত্ব সহকারে দেখে থাকে এটা আপনারা অতিতেও বহুবার লক্ষ করেছেন। করোনা কালিন সময়েও আমরা এই সুযোগ সুবিধা গুলো দিয়েছি এবারও এর ব্যতিক্রম হবে না।
মাহাবুব-উল-আলম হানিফ দীর্ঘ সময় নিয়ে ধর্য্যসহকারে উপস্থিত সাংবাদিকদের সকল প্রশ্ন ও পরামর্শ মূকল আলোচনা মনোযোগ সহকারে শুনেন ও পরে সকল সাংবাদিকদের করা বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে বলেন, সংশ্লিষ্টরা সরকারকে বন্যার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কম দেখালে আসলে তাদের ক্ষতি। বরং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেশি দেখালেই লাভ, বেশি বরাদ্দ আসবে। তাই মনে হয় আপনাদের (সাংবাদিকদের) এ প্রেডিকশনটা ভুল।যেহেতু আপনারা সব চেয়ে বেশি সময় মানুষের খুব কাছাকাছি থাকেন তখন আপনারা ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণটা সঠিকভাবে পর্যলোচনা করে পুক্ষানোপুক্ষ ভাবে সঠিক হিসাব তুলে ধরবেন এতে করে আপনাদের সহযোগিতায় আমরা ক্ষতি গ্রস্ত মানুষের সঠিক উপকার করতে পারবো।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী, মহানগরের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাক জাকির হোসেন ও জেলার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোটেক নাসির উদ্দিন খান।
সাংবাদিকদের সাথে প্রেস ব্রিফিংয়ের সময় উপস্থিত ছিলেন সিলেটের ইলেকট্রনিক মিডিয়া, প্রিন্ট মিডিয়া ও অনলাইন মিডিয়ার সকল সাংবাদিক বৃন্দ।
সম্পাদকঃ মো শফিকুল ইসলাম, নির্বাহী সম্পাদক: কাজী মোস্তফা রুমি, বার্তা সম্পাদকঃ ফারহানা বি হেনা।
বাংলাদেশের বহুল প্রচারিত ও জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল।
Copyright © 2025 Channel One BD. All rights reserved.