আবুল হাসান: আশ্চর্য এক উদ্ভিদের নাম – Channel One BD
মঙ্গলবার, ১০ জুন ২০২৫, ০১:০৪ পূর্বাহ্ন
ব্রেকিং নিউজঃ
টাঙ্গাইল নাগরপুরের বেলতৈলে ফুটবল ফাইনাল টুর্নামেন্ট’২৫ অনুষ্ঠিত টাঙ্গাইলের দেলদুয়ারে ঈদ পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময়ে ব্যস্ত সময় পার করলেন জননেতা মোঃ শরীফুল ইসলাম স্বপন বানিয়াচং উপজেলায় দুপক্ষের সংঘর্ষে একজন নিহতের ঘটনায় উসমান নামের একজন গ্রেফতার মিশিগানে ঈদ সাবেক তালামীযের দায়িত্বশীল নিয়ে ঈদ পূর্ণমিলনীয় অনুষ্ঠান সম্পন্ন পবিত্র ঈদুল আযহা আপনাদের জীবনে বয়ে আনুক অনাবিল সুখ, শান্তি ও আনন্দের ঘনঘটা- ওসি মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম ঈদুল আযহা কেবল একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি একটি আত্মত্যাগের প্রতীক- জননেতা মোঃ হাবিবুর রহমান হবি পবিত্র ঈদুল আযহা সকলের জীবনে বয়ে আনুক অনাবিল সুখ শান্তি ও আনন্দের ঘনঘটা- জননেতা মীর আবুল কালাম আজাদ রতন পবিত্র ঈদুল আযহার কোরবানির এই ত্যাগের মাধ্যমে প্রিয় বাংলাদেশ থেকে মুছে যাক সকল অপশক্তি – জননেতা মোঃ মাইনুল আলম খান কনক ত্যাগের মহিমায় উজ্জীবিত পবিত্র ঈদুল আযহা সকলের জীবনে বয়ে আনুক অনাবিল সুখ, শান্তি ও আনন্দের ঘনঘটা – জননেতা মোঃ শরীফুল ইসলাম স্বপন মহান আল্লাহর প্রতি গভীর আনুগত্য ও সর্বোচ্চ ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর পবিত্র ঈদুল আযহা- জননেতা মোঃ আতিকুর রহমান আতিক

আবুল হাসান: আশ্চর্য এক উদ্ভিদের নাম

চ্যানেল ওয়ান বিডি ডেক্সঃ

রবীন্দ্রনাথ আর জীবনানন্দের সাথে আরও একজন কবি আজকাল আমার সঙ্গে থাকেন।যিনি শুরু থেকেই পাঠককে বৃত্তের বাইরে নিয়ে আপন বলয়ে ভাবাতে পারেন-ধরে রাখতে পারেন দীর্ঘকাল।যিনি ফুল ছিঁড়তেই হয়ে যান মানুষ,তিনি সেই লাবণ্যময় পাথর,গোলাপের নিচে নিহত চির কবিতার কিশোর,২৯ বছরে হারিয়ে যাওয়া এক ক্ষণজন্মা কবি আবুল হাসান।

আধুনিক মানুষের বিচ্ছিন্নতাবোধ,নৈঃসঙ্গ চেতনা,স্মৃতিমুগ্ধতা,আত্মমূখিতা এবং হার্দিক রক্তক্ষরণের রূপকার হিসেবে বাংলার কবিতার জমিনে কবি আবুল হাসান এক বিশিষ্ট নাম-এক আশ্চর্য কবিতার উদ্ভিদ।ষাটের দশকের মধ্যলগ্নে বাংলা কাব্যাঙ্গনে আবির্ভূত হয়ে অতি অল্প সময়ের মধ্যে তিনি নির্মাণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন তাঁর এক নিজস্ব রাস্তা।

আত্মতা এবং আমিত্মই আবুল হাসানের সাহিত্যকর্মের মূখ্য উপজীব্য মূলত:মানুষ,নারী,নৈঃসঙ্গচেতনা অথচ চরম আশাবাদী।

আবুল হাসানকে নিয়ে লেখা কবি শহীদ কাদরীর একটা কবিতা পড়েছিলাম অনেক আগে।আবুল হাসান একটি উদ্ভিদের নাম শিরোনামের অসম্ভব ভালো লাগা এ কবিতায় কবি মনে করেন-কবি,কবিতা আর আবুল হাসান সবকিছু মিলে যেন মুদ্রার এপিট-ওপিট সত্যিকারের এক কবিতার গাছ।

অবশেষে জেনেছি মানুষ একা। জেনেছি মানুষ তার চিবুকের কাছেও ভীষণ অচেনা ও একা।(পাখি হয়ে যায় প্রাণ)।

আবুল হাসানের জীবন বোধ ও শিল্পীসত্তার মৌল পরিচয় তাঁর প্রবাদ প্রতিম আমিত্ব,আত্মতা এবং নিঃসঙ্গতার মধ্যে নিহিত। জানি,প্রকৃত অর্থে শূন্যতা ও নৈঃসঙ্গতাই কবির নিয়তি,না-হলে কবিতাকে বিষয়,ধর্ম এবং রাজনীতি খেয়ে ফেলে।তাই তো ষাটের দশকের কবি হয়েও তাঁর মধ্যে লক্ষ করা যায়। এক ধরনের বাউল বা বৈঞ্চবীয় নির্লিপ্ততা আর ঔদাসীন্য। তাঁর কবিতায় এতো গান আর এমন শূন্যতা ষাটের দশকের অন্য কবিদের মধ্যে আর তেমন একটা চোখে পড়ে না।

আবুল হাসান সরাসরি কোনো রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন না।কিন্তু তিনি রাজনীতি সচেতন ছিলেন। তাই তো তাঁর কবিতায় স্বপ্ন ও আশাবাদে সেই রাজনীতিকেই পাঠ করি:
উদিত দুঃখের দেশ তাই বলে হে কবিতা,
দুধভাত তুমি ফিরে এসো…

প্রণয় আর প্রতারণা,রিক্ততা আর রুগ্নতা অতিক্রম করে জয়শ্রী জীবনের সন্ধানেও কবি আবুল হাসান উপস্থিত হন-সমষ্টির আঙ্গিনায়। আত্মভাষ্যের অন্তরালে তাঁর কবিতায় লক্ষ করা যায় সমকালীন বাংলাদেশের নানা আলোড়ন বিলোড়ন,মূল্যবোধহীনতা, রাজনৈতিক সেচ্ছাচার,সংগ্রামশীল মানুষের দুর্মর জীবন যন্ত্রণা,স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মৃতি এবং যুদ্ধোত্তর বিপন্নতার চিত্র।আবুল হাসানের স্বাতন্ত্র্য এখানে যে,তিনি নিখিল নিরাশার প্রান্তরে বাস করেও মানুষকে শুনান আশার গান:
অনেক রক্ত গেলো/শিমুল তুলোর মতো/..ছোট ভাইটিকে আমি কোথাও দেখি না।
অথবা মানুষ যদিও বিরহকামী,কিন্তু তার মিলনই মৌলিক।

জীবনের সকল দুঃখ-যন্ত্রণা-রক্তক্ষরণ আর নিঃসঙ্গতাকে ধারন করা আবুল হাসান ধূর্জটির মতো বেদনায় নীল হয়েছেন। কিন্তু তাই বলে কখনও আশাহীন হয়ে পড়েননি। অন্তত তাঁর কবিতা বলে না:
ঝিনুক নীরবে সহো,ঝিনুক নীরবে সহে যাও/
ভিতরে বিষের বালি/মুখ বুজে মুক্তা ফলাও।

বাংলা সাহিত্যে সুকান্তের পর দ্বিতীয় ক্ষণজন্মা আপাদমস্তক কবি আবুল হাসানের জীবদ্দশায় মাত্র তিনটি কবিতার বই বেরিয়েছিল।রাজা যায় রাজা আসে,যে তুমি হরণ করো এবং পৃথক পালঙ্ক। পৃথক পালঙ্ক প্রকাশের পর কবি হাসান হাফিজুর রহমান এক ভাষণে বলেছিলেন,আবুল হাসান তাঁর এই বইয়ে কবিতার যে শিখরে পৌঁছেছে আপনারা ষাটের দশকের কেউ সেখানে যেতে পারেননি।

আবুল হাসান সম্পর্কে কবি নির্মলেন্দু গুণের ভাষ্য: আবুল হাসান আনখশির কবি।কবিতার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এমন কোনো বিষয় নেই,যা তার আরাধ্য।অর্থ নয়,বিত্ত নয়,প্রতিপত্তি নয়,এমন কি চূড়ান্ত অর্থে নারীও নয়-কবিতা,শুধু কবিতাই আরাধ্য তাঁর।

হা সুখি মানুষ,তোমরাই শুধু জানলে না
অসুখ কত ভালো/কত চিরহরিৎ বৃক্ষের
মতো শ্যামল।

একজন কবির জীবন বলতে যা বোঝায় তা এই বাংলায় আবুল হাসানই যাপন করতে চেয়েছিলেন।মানুষের রক্তের ভেতর যে রক্তক্ষরণ,যে দহন আর যন্ত্রণা তা আবুল হাসানের কবিতার ভেতর পাই।যেন সকলের বেদনা একা ধারন করে তিনি রচনা করছেন আপন যাতনার মানচিত্র।আমাদের সমকালীন কবিতায় তাঁর প্রভাব ভালোভাবেই ব্যাপ্ত।আমরা এখনও যদি কোনো কবিতা লেখতে যাই-ঠিক যেন হয়ে যায় তাঁর কবিতা।

বাক্যে শব্দের ব্যবহার,উপসর্গ,রূপালঙ্কার,উপমা সৃষ্টিতে তিনি ছিলেন সৎ এবং দক্ষ।এবং বলা বাহুল্য যে,কবিতায় পরপর গল্প বর্ণনা থাকলেও তাঁর কবিতা বাহুল্যহীন। আবুল হাসান গ্রাম থেকে শহরে এসেছিলেন কিন্তু তিনি নাগরিক যন্ত্রণার ভেতর থেকেও পরম আনন্দে গ্রামকে ভুলে যাননি।তিনি লেখেন:
মনে পড়ে সরজু দিদির কপালের লক্ষ্মী চাঁদ তারা/
মনে পড়ে তার নরম…।

সৃষ্টির মূল্যায়নে আবুল হাসানও হয়তো সমালোচনার উর্ধ্বে নন;তবে সময়ের পালাবদলে নির্জনতম জীবনানন্দ থেকে বেরিয়ে এসে আমাদের আবুল হাসানের সুরমার জলের মতো নিঃসঙ্গতম কবি হয়ে ওঠাটা চমকপ্রদ ইতিহাসই বটে।আমাদের প্রিয় কবি আবুল হাসান শূন্যতার ভেতর অভিমানের বাদলে ভেজে যাওয়া এক চির কোমল পাথর;আশ্চর্য উদ্ভিদের আজ জন্মদিন। শুভ জন্মদিন কবি।

দায় স্বীকার:আবুল হাসান রচনাসমগ্র,আবুল হাসানের অপ্রকাশিত কবিতাবলি,মাসিক উত্তরাধিকার(আষাঢ় ১৪১৯)

লেখক: সুলেমান কবির

শিক্ষক ও সংস্কৃতিকর্মী



Our Like Page