চ্যানেল ওয়ান বিডি ডেক্সঃ
যতদূর চোখ যায় উত্তাল সমুদ্র। নীল সাগরের ওপর দেখা যাচ্ছে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা দৃষ্টিনন্দন অসম্ভব সুন্দর কারুকাজখচিত একটি ভাসমান মসজিদ। অবিশ্বাস্য হলেও অদ্ভুত সুন্দর এই মসজিদটির অবস্থান মরক্কো উপকূলের মাঝসাগরে। দূরের কোনো জাহাজ থেকে একে দেখলে মনে হবে ঢেউয়ের বুকে যেন মসজিদটি দুলছে,আর মুসল্লিরা পানির ওপরই নামাজ পড়ছেন।
আশ্বর্যজনক এই স্থাপনাটির নাম গ্র্যান্ড মস্ক হাসান-টু। মরক্কোর কাসাব্লাঙ্কা শহরে এটি তৈরি করেছেন বাদশাহ দ্বিতীয় হাসান। এর নকশা তৈরি করেছিলেন ফরাসি স্থপতি মিশেল পিনচিউ। নির্মাণ কাজের দায়িত্বে ছিলেন ফরাসি কোম্পানি বয়গিসের একদল প্রকৌশলী এবং নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৮০ কোটি ডলার।মরক্কো সরকারের পক্ষে তো এত টাকা ব্যয় করা সম্ভব নয়,তাই নেওয়া হল অভিনব উদ্যোগ।সরকারের পক্ষ থেকে অনুদানের রশিদ পাঠিয়ে দেশটির নাগরিকদের কাছে। প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ অর্থ দান করলেন। এছাড়া এগিয়ে এসেছে বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। অর্থ সহায়তা করেছে কুয়েত,সৌদি আরবসহ আরো কিছু রাষ্ট্র।
ভাসমান ওই মসজিদটিতে একসঙ্গে প্রায় ১ লাখ মানুষ নামাজ পড়তে পারেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। মসজিদটির মিনারের উচ্চতা ২০০ মিটার। আর মেঝ থেকে ছাদের উচ্চতা ৬৫ মিটার।মসজিদটির মেহরাবের উচ্চতা দোতলা ভবনের সমান। আর মিনারের উচ্চতা ২১০ মিটার। ৬০ তলা ভবনের সমান এ মিনারের ওপর রয়েছে লেজার রশ্মি,যা নাবিকদের দেখিয়ে দেয় পবিত্র কাবা শরিফের পথ। ৩০ কিলোমিটার দূর থেকেও স্পষ্ট দেখা যায় এই লেজার রশ্মি। বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু মিনার এটি।
মহাসাগরে ভাসমান এ মসজিদটি মরক্কোসহ আফ্রিকার সবচেয়ে বড় মসজিদ। মসজিদটির মজার ব্যাপার হলো ঝড়–বৃষ্টির সময় ছাড়া প্রাকৃতিক আলো ও মুক্তবাতাস প্রবেশ করায় মসজিদটির স্বয়ংক্রিয়ভাবে খুলে যাওয়া ছাদ যা বন্ধ ও খুলে যায় প্রতি তিন মিনিট পরপর।ফলে এর ভেতরে আলো-বাতাসের কোনো কমতি হয় না কখনো। ৩৩ ফুট উচ্চতার সামুদ্রিক ঢেউ সামলে নেওয়ার ব্যবস্থা আছে মসজিদটিতে।সমুদ্রের কোনো গর্জন শোনা যায় না মসজিদটির ভেতর থেকে।
২২.২৪ একর জায়গার ওপর অবস্থিত এ মসজিদের মূল ভবনের সঙ্গেই আছে লাইব্রেরি,কোরআন শিক্ষার ব্যবস্থা,অজুখানা এবং কনফারেন্স রুম। আড়াই হাজার পিলারের ওপর স্থাপিত এ মসজিদের ভেতরের পুরোটাই টাইলস বসানো।মসজিদ এলাকার আশপাশ সাজানো হয়েছে ১২৪টি ঝরনা ও ৫০টি ক্রিস্টালের ঝাড়বাতি দিয়ে। শুধু তা–ই নয়,কোথাও কোথাও এসব মোড়ানো হয়েছে স্বর্ণের পাত দিয়ে।
১৯৮৭ সালের আগস্ট মাসে এই মসজিদটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। প্রায় ৭ বছরে ২৫ হাজার শ্রমিক ও কারুশিল্পীর পরিশ্রমে ১৯৯৩ সালে এটির নির্মাণকাজ শেষ হয়। এটি মরক্কোর বৃহত্তম মসজিদ এবং পৃথিবীর ১৩তম বৃহৎ মসজিদ। এর আয়তনের তিন ভাগের এক ভাগ আটলান্টিক মহাসাগরের ওপর হওয়ায় একে ভাসমান মসজিদও বলা হয়।
সম্পাদকঃ মো শফিকুল ইসলাম, নির্বাহী সম্পাদক: কাজী মোস্তফা রুমি, বার্তা সম্পাদকঃ ফারহানা বি হেনা।
বাংলাদেশের বহুল প্রচারিত ও জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল।
Copyright © 2025 Channel One BD. All rights reserved.