চ্যানেল ওয়ান বিডি ডেক্সঃ
সিলেটের স্বরণ কালের ভয়াবহ বন্যায় বন্যার্তদের পাশে দাড়িয়েছেন সাধারণ মানুষ। যার যার আছে তা নিয়েই ছুটছেন বন্যায় অনিদ্রা,অনাহারে ভোক্তভোগী অসহায় মানুষদের মুখে একমুঠো খাবার তুলে দিতে। অসহায়, দিশেহারা মানুষদের কাছে তারা যেন স্বর্গদেবতা।
এদেরই মধ্যে একজন হলেন সিলেটের শিবগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা একই সাথে উদ্যোক্তা আমিনা খুশি। অনলাইন ভিত্তিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ‘গ্ল্যামডাস্ট’ এর পরিচালক তিনি। চলমান এই বন্যা পরিস্থিতিতে থেমে থাকতে পারেননি খুশি। তিনি প্রথমে সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে পোস্ট দেন ‘সিলেট শহরে আমার ফ্রেন্ডলিস্টে থাকা কোন ফ্যামিলি যদি খাবারের কোন কষ্টে থাকেন, ইনবক্সে জানাবেন।পরিচয় গোপন রাখা হবে।’ এরপর তিনি আখালিয়ার একটি ছাত্রী হোস্টেলে পানি বন্দি থাকা ছাত্রীদের ওষুধ, স্যানিটারি প্যাড ও খাবার পাঠান। নিজ উদ্যোগে তাঁর এই ছোট ছোট কার্যক্রম দেখে তাঁর পেইজের অনেক ফলোয়ার এবং তাকে ব্যক্তিগত ভাবে চিনেন অনেকে বন্যার্তদের সাহায্য করতে টাকা পাঠাতে চান। তাদের দেওয়া অর্থ সংগ্রহ করে বন্যার্থ মানুষের সাহাযার্থে বড় পরিসরে কাজ শুরু করেন।
আমিনা খুশি বলেন, প্রথমে আমি আমার সাধ্যমত ওষুধ, স্যানিটারি প্যাড ও খাবার দিয়ে মানুষজনকে সাহায্য করেছি। তারপর যখর ডোনেশন আসল তখন আরেকটু বড় আকারে কাজ শুরু করলাম। একজন নারী হিসেবে আমি জানি পিরিয়ড কালে মেয়েদের কত কষ্ট হয়। এই বন্যার কষ্টের মধ্যে মেয়েরা পিরিয়ডজনিত ব্যবহার্য উপাদান পাবে না। তাই প্রথমে আমি গ্ল্যামডাস্ট থেকে ফ্রি স্যানিটারি ন্যাপকিনের ব্যবস্থা করি। সিলেটের গোয়াইনঘাট, সুনামগঞ্জের তাহিরপুর, সিলেট নগরীর কিছু ছাত্রী হোস্টেলে ও বিভিন্ন সংগঠন যারা বন্যার্থদের সেবায় কাজ করছে তাদের নেতৃবৃন্দকে দিয়েছি বিতরণের জন্য। এ ছাড়া বাচ্চাদের জন্য দুধ, ব্রেড, বিশুদ্ধ পানি পাঠিয়েছি বন্যা কবলিত এলাকায়। পাশাপাশি বাঘা নামের একটি এলাকায় ২০০ মানুষকে খিচুড়ি রান্না করে খাওয়ানোর জন্য ফান্ড দিয়েছি। বুধবার আমরা কয়েকজন মিলে কোম্পানীগঞ্জ এলাকায় যাব ত্রাণ বিতরণ করতে। যতদিন ডোনেশন আসবে আর আমার সাধ্য থাকবে ততদিন আমি বন্যার্থ মানুষকে সাহায্য করে যাব।
স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহতম বন্যায় আক্রান্ত সিলেটবাসী। আর এই দুর্যোগে আমিনা খুশির মত অনেক মানুষ বন্যার্থদের সাহায্য করে মানবিকতার পরিচয় দিয়েছেন। যার যা আছে তাই নিয়ে নেমে পড়েছেন মানুষকে সাহায্য করতে। ফেসবুক ভিত্তিক গ্রুপ, ব্যক্তিগত উদ্যোগ, সামাজিক- সাংস্কৃতিক সংগঠন, রাজনৈতিক সংগঠন, পুলিশ প্রশাসন, এনজিও, বন্ধুবান্ধব পরিচিতজন মিলে একত্রিত হয়ে বন্যার্থ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন অসংখ্য মানুষ।
নিজের হাত খরচ ও সংসারের টাকা বাঁচিয়ে, আত্মীয় স্বজনদের কাছ থেকে ডোনেশন এনে প্রায় প্রতি মাসেই নগরীর বিভিন্ন কলোনিতে খাবার বিতরণ করেন চৌধুরী জান্নাত রাখি। নগরীতে বন্যার পানি প্রবেশের পরই কলোনিগুলির পরিচিত অনেকেই কল দিচ্ছিলেন খাবারের জন্য। হাতে তেমন টাকাও নেই তাই চিন্তায় পরে গেলেন রাখি। তখন তার ছোট মেয়ে দুটি তাদের ঈদে কাপড় কেনার জন্য পাওয়া উপহারের টাকার ব্যাংকটি নিয়ে রাখিকে দেন। এই বিষয়টি রাখি ফেসবুকে শেয়ার করার পর তার বন্ধু বান্ধব আত্মীয়- স্বজন তার কাছে টাকা পাঠান বন্যার্থদের সাহায্য করার জন্য। এরপর তিনি কিছু সেচ্ছাসেবীদের সহযোগিতায় বিস্কুট, কেক, চিড়া, মুড়ি, রান্না করা খাবার, বিশুদ্ধ পানি নিয়ে বন্যার্থ মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে পৌঁছে দিলেন। এখনো তিনি থাবার বিতরণ অব্যাহত রেখেছেন।
চৌধুরী জান্নাত রাখি বলেন, মানুষের এত খারাপ অবস্থা আগে দেখিনি। সুনামমগঞ্জের ছাতক উপজেলায় গিয়েছিলাম খাবার বিতরণ করতে। আমরা স্রোতের জন্য নৌকা নিয়ে সামনে এগোতে পারছিলাম না। মানুষ সাঁতার দিয়ে আসছে খাবার নেবার জন্য। মানুষের ঘর নেই, কাপড় নেই, ধান নেই সব ভাসিয়ে নিয়ে গেছে বন্যার পানি। বন্যা পরবর্তী তাদের কি অবস্থা হবে এ ব্যাপারটা মাথায় রেখে আমাদের কাজ করতে হবে।
বন্যার পানি আসার পর হুটহাট করে কয়েকজন বন্ধু মিলে সিলেট নগরীতে বন্যার্থ মানুষকে সাহায্য শুরু করে পরিবেশ কর্মী বিনয় ভদ্র। তাকে উৎসাহ দিতে বন্ধু-বান্ধবসহ স্বজনরা ফান্ড পাঠানো শুরু করেন। স্বপ্রণোদিত হয়ে এলাকার কিছু ছোট বড় ভাই সেচ্চাসেবামূলক কাজে যোগ দেয়। এই কাজ শুরু তাদের। সিলেট শহরের সুরমা পাড়ের একটি পাড়া মাছিমপুর। এখানে একটা অংশে মনিপুরীদের বাস। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও তাদের বাড়িতে এসেছিলেন। তাদের সব বাড়িঘরে এখনো পানি। ওখানে ওদের কমিউনিটির বাইরে কেউ কিছু নিয়ে যায়নি। বুকসমান পানি ঠেলে বিনয় তার দল নিয়ে হাজির হন। বিনয় বলেন, এই পাড়ার সবাই অবস্থা সম্পন্ন মানুষ, বেকায়দায় পড়েছেন বলে ত্রাণ নিচ্ছেন। তাই ডোর টু ডোর গিয়ে সব পরিবারকে অল্প শুকনো খাবার ও পানি দিয়ে আসতে পেরে আমরা ধন্য হয়েছি।
বিনয় ভদ্র আরও বলেন, আমরা নিজেদেরকে দাতাগোষ্ঠীর পাঠানো ত্রাণ বন্যার্তদের কাছে ছহি ছালামতে পৌঁছে দেওয়ার ডেলিভারি ম্যান মনে করি। এইটা আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। মানুষ মানুষের জন্য এবং আমরা কুকুর বিড়ালের পাশেও আছি।
সম্পাদকঃ মো শফিকুল ইসলাম, নির্বাহী সম্পাদক: কাজী মোস্তফা রুমি, বার্তা সম্পাদকঃ ফারহানা বি হেনা।
বাংলাদেশের বহুল প্রচারিত ও জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল।
Copyright © 2025 Channel One BD. All rights reserved.