চ্যানেল ওয়ান বিডি ডেক্সঃ
দলের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্যদের নিয়ে টুঙ্গীপাড়ায় সফরে গেলেন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন।বৃহস্পতিবার (২৫ আগষ্ট) সিলেট থেকে লাইটেস যোগে তিনি যাত্রা শুরু করেন।এর আগে নিজের ফেসবুক আইডিতে স্ট্যাটাসে টুঙ্গীপাড়ায় সফরে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন তিনি।
ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি লিখেন,সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্যদের নিয়ে জাতির জনকের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ার উদ্দেশ্যে আমরা রওয়ানা হলাম।নিরাপদ পথযাত্রার জন্য সকলের দোয়া কামনা করছি,আমীন।
মহানগর সেক্রেটারীর নের্তৃত্বে টুঙ্গিপাড়ায় সফরসঙ্গী টিমের সাথে রয়েছেন একজন সংবাদ কর্মীও।সংবাদ কর্মীর নাম আবদুল মুহিত দিদার।মূলত মিডিয়াকর্মী হিসেবে আবদুল মুহিত দিদার সফরসঙ্গী হিসেবে থাকার পর থেকেই শুরু হয় নানা আলোচনা সমালোচনা।এতে করে দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে বিরাজ করছে ক্ষোভ।
দলীয় নেতাকর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলন,বিষয়টি অধ্যাপক সাহেব ভালো করে জেনে শুনে এবং বোঝেই করেছেন।কারণ,সিলেটে হয়তো মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের কোনো সাংবাদিক ছিলেন না।তাই এমনটি ভেবেই হয়তো তিনি জামায়াত পরিবারের এই সাংবাদিক ব্যক্তিকেই মিডিয়াকর্মী হিসেবে সফরসঙ্গীর তালিকায় যুক্ত করেছেন।
জানাগেছে,আবদুল মুহিত দিদারের আপন ভায়রা ভাই মুশফিকুল ফজল আনসারী। যিনি সরকার এবং আওয়ামী লীগ নিয়ে দেশে-বিদেশে বিভিন্ন সময় টকশো এবং ইউটিউভেও সরকার বিরোধী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।তাছাড়া আবদুল মুহিত দিদারসহ তাঁর পুরো পরিবার জামায়াত-শিবির ঘরানার বলে প্রচার রয়েছে সিলেটে বিভাগ জুড়ে।বিভিন্ন সময়ে সংগঠনের সহযোগিতায় বিভিন্ন কার্যক্রমের সাথেও জড়িত ছিলেন সক্রিয়ভাবে।এই বিষয় গুলো তুলে ধরে এমনটাই ক্ষোভ প্রকাশ করেন দলীয় নেতাকর্মীরা।
দলীয় নেতাকর্মীরা বলেন,অধ্যাপক জাকির হোসেনের কাছে আমরা কোন ভাবেই এটা আশা করিনি,বাংলাদেশ তথা বিশ্বের ইতিহাসের জঘন্যতম,নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শোকাবহ মাস এটি।শোকের এই মাসে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ সপরিবারকে নৃশংস ভাবে হত্যা করা হয়।এটি শুধু মাত্র জাতির জন্য গভীর শোক ও বেদনার মাস নয়,এই মাসটি হত্যা,ষড়যন্ত্র,ক্যু রুখে দেওয়ার শপথ গ্রহণেরও মাস।গণতন্ত্রের পথে সাংবিধানিক নিয়মতান্ত্রিকতায় দেশ শাসনের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ প্রতীতিতে সমুন্নত হওয়ারও মাস এটি।গণতন্ত্রবিরোধী চক্রের যে কোনও অপতৎপরতা-ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করার জন্য সর্বদা প্রস্তুত থাকার শক্তিতে উজ্জীবিত হয়ে শোক ও বেদনার মধ্যেও সমগ্র জাতিকে ঐক্য উন্নয়ন ও প্রগতির পথে চলার শপথে উদ্ভাসিত হওয়ার এই মাসটি।যেখানে আগস্ট মাস শুরুর প্রথম থেকেই জাতি গভীর শোক ও শ্রদ্ধায় স্মরণ করে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সকল সদস্যদের,পালিত হয় জাতীয় শোক দিবস।যথাযোগ্য মর্যাদা,শ্রদ্ধা,ভালোবাসা ও ভাবগম্ভীর মধ্য দিয়ে টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয় সেই খানে এই মুহুর্তে অধ্যাপক জাকির হোসেনের মতো সিনিয়র নেতার কাছ থেকে কোন ভাবেই আমরা এটা প্রত্যাশা করিনি বিষয়টি আমাদের জন্য দু:খজনক।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মহানগর আওয়ামী লীগের জনৈক নেতা বলেন,বিয়ানীবাজারেরর কুখ্যাত রাজাকার পরিবারের সন্তান এবং ব্যবসায়ী নেতার গুলশানস্থ বাসায়ও সফরসঙ্গীর টিম যাত্রা বিরতি করেন।
এদিকে,জামায়াত-শিবির ঘণিষ্ট পরিবার সদস্য এবং আওয়ামী লীগ বিরোধী মুশফিকুল ফজল আনসারীর ভায়রা ভাইকে সফরসঙ্গী করায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে নানা প্রতিক্রিয়া।ইতোমধ্যে দলীয় নেতাকর্মীরাও বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে শুরু করেছেন।বিষয়টিকে দু:খজনক এবং শোকের মাসে দলের সাথে সাংঘর্ষিক হিসেবেও বিবেচনা করছেন তাঁরা।
সাবেক ছাত্রলীগ কর্মী রঞ্জন দে নিজ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে ফেসবুকে লিখেন,আমাদের সিলেটে কি সাংবাদিকের এতই অভাব পড়েছে যে যার কারনে এই সাংবাদিক ব্যক্তিকেই টুঙ্গিপাড়ায় সফরেসঙ্গী করে নিয়ে যাচ্ছেন,দুঃখের বিষয় হচ্ছে উনারা যাকে সাংবাদিক হিসেবে নিয়ে যাচ্ছেন।তিনি জাতিসংঘে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে একের পর এক নালিশ প্রদানকারী মুশফিকুল ফজল আনসারীর আপন ভায়রা ভাই।আপনার কাছ থেকে এটা আশা করাই যায় মাননীয় শিক্ষক মহোদয়।
মহানগর কমিটির সাবেক সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক ও বর্তমান সদস্য প্রিন্স সদরুজ্জামান চৌধুরী বলেন,খবরটি খুবই উদ্বেগজনক! আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এরকম একজন ব্যক্তিকে নিয়ে টুঙ্গিপাড়া সফর করলেন যার পুরো পরিবার জামায়াত ঘড়ানার রাজনীতির সাথে জড়িত।মহানগর আওয়ামী লীগের একজন হিসেবে এটা আমাদের জন্য বিব্রতকর।প্রতিক্রিয়াশীল চক্র এভাবেই আওয়ামী লীগের কাঁদে ভর করে নিজেদেরকে পূনর্বাসন করছে।যা রীতিমত দলের জন্য শংকার বিষয়!
মহানগর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সিসিকের কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ বলেন,আবদুল মুহিত দিদার সম্পর্কে আমার কোনো তথ্য জানা নেই।যদি তিনি জামায়াত রাজনীতিভুক্ত পরিবারের শুভাকাঙ্খি হয়ে থাকেন,তবে দলের সাধারণ সম্পাদকের সফরসঙ্গী তালিকায় নামটি থাকা খুবই দু:খজনক।তিনি বলেন,দলের উপদেষ্টা মন্ডলীকে নিয়ে এ রকম সফর যাত্রার বিষয়টি দলীয় ভাবে সিদ্বান্ত হয়ে থাকলে সেটি আমি জানি না।হয়তো আমার অনুপস্থিতিতে অন্যরা সেটি ভালো বলতে পারবেন। আর দলীয় সিদ্বান্ত ছাড়া যদি সেটি হয়ে থাকে,তবে আমি সফরটিকে ব্যক্তিগত সফর বলেই ধরে নিব। ব্যক্তিগত সফরে কে কাকে সাথে নিলেন,সেটির দায়ও ব্যক্তির উপরে বর্তায়।
দলের সহ-সভাপতি আসাদ উদ্দিন আহমদ বলেন,বিষয়টি আমি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে অবগত হয়েছি।এ বিষয়ে বিভিন্নজন আমাকে নানা প্রশ্নও করেছে। আমি বলেছি,বিষয়টি নি:সন্দেহে লজ্জাজনক।সফরসঙ্গী হিসেবে মিডিয়া কর্মী হিসেবে কাউকে নিতে চাইলে সিলেটে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শত শত সংবাদকর্মী রয়েছেন।তাদেরকে না নিয়ে একটি চিহ্নিত পরিবারের সদস্যকে সফরসঙ্গীর তালিকায় রাখা একজন দায়িত্বশীল আওয়ামী লীগারের অবশ্যই সমিচীন নয়।
অধ্যাপক জাকির হোসেনের বক্তব্য জানতে সেলফোনে কল দিলেও মোবাইল বন্ধ থাকায় মন্তব্য আদায় করা সম্ভব হয় নি।